বেপরোয়া: বাইক নিয়ে রেস দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে। ফাইল ছবি
দু’বছর আগে ফেরারি-দুর্ঘটনায় কলকাতার এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর পরে ছবিটা বদলেছিল। কিন্তু ফের জাতীয় সড়কে ফিরে এসেছে গতির-ঝড়। এ বার দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে মৃত্যু হল এক মোটরবাইক আরোহীর। গাড়ি-চালকদের অভিযোগ, পুলিশি নজরদারি শিথিল হতেই ফিরে এসেছে বেপরোয়া গাড়ি চালানোর প্রবণতা।
রবিবার প্রজাতন্ত্র দিবসের সকালে সিঙ্গুরে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের মল্লিকপুর সেতুতে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না-পেরে যে মোটরবাইক আরোহীর পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় তাঁর নাম অজয় ঘোষ (২০)। তিনি উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুরের বাসিন্দা। ওই এলাকা থেকেই আরও ৮-১০ জন মোটরবাইক আরোহীর সঙ্গে তিনি বেরিয়েছিলেন। ওই সড়কের বর্ধমানমুখী লেনে ওই দুর্ঘটনার পরে অজয়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাঁচানো যায়নি।
সাধারণ মানুষের প্রশ্ন, জাতীয় সড়ক ভরে রয়েছে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর বিজ্ঞাপনে। কিন্তু পুলিশের সঙ্গে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ যৌথ অভিযানে না নামলে কী ভাবে আটকানো যাবে ওই মারণ-খেলা? ওই গতির খেলা যাঁরা খেলছেন তাঁরা শুধু নিজেদেরই বিপদ ডেকে আনছেন না, ওই পথে যাঁরা টোল দিয়ে যাঁরা যাচ্ছেন, তাঁদের জীবনের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
হুগলি জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন সময়ে ওই গাড়ির রেস বন্ধে নজরদারির পাশাপাশি অভিযান চালাই। পথ নিরাপত্তায় পুলিশের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক নানা ক্যাম্প করা হয়। এরপরও মানুষ সচেতন না হলে মুশকিল। অবুঝ হলে চলবে না।’’
দু’বছর আগে পর্যন্ত রবিবারের সকাল মানে কলকাতা থেকে পোর্সে, বিএমডব্লু, ল্যাম্বরগিনি, জাগুয়ার, ফেরারি-র মতো বিদেশি গাড়ির গতির ঝড় তুলে বেরিয়ে পড়া দেখা যেত। মোটরবাইক নিয়েও বহু যুবক সেই গতির দৌড়ে শামিল হতেন। দ্বিতীয় হুগলি সেতু পেরিয়ে প্রথমে মুম্বই রোড ধরে দৌড়। তার পরে ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে গতি বাড়াত ‘সুপার-কার’। ‘ফিনিশিং পয়েন্ট’ সাধারণত হতো হুগলির গুড়াপের একটি ধাবা। গাড়ির দৌড় দেখতে ডানকুনির মাইতিপাড়া, সিঙ্গুরের রতনপুর, দাদপুরে ভিড়ও হতো। কিন্তু ২০১৮ সালের জুনে সিঙ্গুরের গোপালনগর থেকে ফেরার পথে ডোমজুড়ের পাকুড়িয়া সেতুর গার্ডওয়ালে তীব্র গতিতে এসে ধাক্কা মারে প্রায় চার কোটি টাকা দামের, ‘ক্যালিফোর্নিয়া টি’ মডেলের ফেরারি। মৃত্যু হয় গাড়ির মালিক তথা চালক, কলকাতার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শিবাজি রায়ের। সেই দুর্ঘটনার পরেই পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি এবং নানা বিধিনিষেধের জেরে সেই গতির ঝড়ে লাগাম পরে।
কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে রবিবার-সহ বিশেষ ছুটির দিনগুলিতে দামি গাড়ি ও মোটরবাইকের ঊর্ধ্বশ্বাস দৌড়ের ছবিটা ফিরে এসেছে। ফের লাগাম কবে পরবে, সেটাই প্রশ্ন।
তথ্য সহায়তা: দীপঙ্কর দে