ফুটবল মাঠে বাঁশি মুখেই স্বচ্ছন্দ

স্বপ্নপূরণের পথে মনিকা

সালটা ২০০৯। কলকাতা ময়দানে অনুশীলন করছিলেন হাওড়ার বাগনানের আন্টিলা গ্রামের মেয়ে মনিকা জানা। পাশেই চলছিল রাগবির অনুশীলন। রাগবি দলের কোচ তাঁদের জানান, সামনেই মুম্বইয়ে খেলা রয়েছে।

Advertisement

অভিষেক চট্টোপাধ্যায়

বাগনান শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৯
Share:

সামনে বাঁ দিকে মনিকা জানা।

সালটা ২০০৯। কলকাতা ময়দানে অনুশীলন করছিলেন হাওড়ার বাগনানের আন্টিলা গ্রামের মেয়ে মনিকা জানা। পাশেই চলছিল রাগবির অনুশীলন। রাগবি দলের কোচ তাঁদের জানান, সামনেই মুম্বইয়ে খেলা রয়েছে। কিন্তু দল করা যাচ্ছে না। ইচ্ছে না থাকলেও সে বার দলের কর্তাদের অনুরোধে রাগবি খেলতে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন বাগনানের মেয়েটি।

Advertisement

কিন্তু তিনি রাগবি খেলোয়াড় হননি। হননি ফুটবল খেলোয়াড়ও। হয়েছেন ফিফা রেফারি। তার জন্য সেই মুম্বই সফরের ভূমিকা অপরিসীম।

সেই সফরে মনিকার সঙ্গী ছিলেন আর এক প্রাক্তন ফিফা রেফারি অনামিকা সেন। তাঁর হাতে রেফারির নিয়মকানুন সম্পর্কিত একটি বই ছিল। কৌতূহলবশত সেই উল্টে পাল্টে দেখে মনিকার রেফারি হওয়ার ইচ্ছে জন্মায়। শুরু হয় সেই সংক্রান্ত পড়াশোনা। তার পরে তাঁকে ফিরে তাকাতে হয়নি। দিন আনি দিন খাই পরিবারের সেই মেয়েটি এখন বাংলার একমাত্র মহিলা ফিফা রেফারি, যিনি নিয়মিত ম্যাচ খেলাচ্ছেন। শিলিগুড়িতে সদ্য হয়ে যাওয়া মহিলা সাফ ফুটবলের উদ্বোধনী ম্যাচের বাঁশি ছিল তাঁরই মুখে। খেলিয়েছেন সম্প্রতি হয়ে যাওয়া মহিলা আই লিগের ফাইনাল ও একাধিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ।

Advertisement

তবে রেফারিং-এর ক্লাস করতে করতেই কলকাতা ময়দানে প্রথম ম্যাচ খেলান তিনি। সেটি ছিল একটি অফিস ম্যাচ। তিনি ছিলেন লাইন্সম্যানের ভূমিকায়। তাঁর অকপট স্বীকারোক্তি, ‘‘সেই ম্যাচে একটি অফসাইডে গোল হয়েছিল। আমি বুঝতে পারিনি। তার পর যাদের বিরুদ্ধে গোলটি হয়েছে তাদের ফুটবলার এবং কর্তারা আমাকে গালাগাল দিতে শুরু করেছিলেন। ঘোড়সওয়ার পুলিশ এসে আমাকে বাঁচিয়েছিল।’’

রেফারি হিসেবে জীবনের অভিষেক ম্যাচে এই অভিজ্ঞতার পরে রাজ্য রেফারি সংস্থার অনেকে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘কী রে, এর পর এখনও রেফারি হওয়ার শখ আছে তো?’’ তিনি যে দমে যাননি তার প্রমাণ মিলেছে পরবর্তী সময়ে। মেয়েদের ম্যাচ তো বটেই, ছেলেদের ম্যাচেও রেফারিং করেছেন তিনি। প্রাক্তন ফিফা রেফারি সাগর সেন, কালিদাস মুখোপাধ্যায়, জাতীয় রেফারি রথীন বন্দ্যোপাধ্যায়দের কথায়, ‘‘ওঁর সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট হল ওঁর ফিটনেস। সব সময়ে বলের সামনে থাকার চেষ্টা করে।’’

এই সাফল্য সহজে আসেনি। গরিব ঘরের মেয়ে ফুটবল খেলবে সে কথা মানতে চাননি তাঁর পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। রেফারিং শুরু করার পরে সেই বাধা আরও বাড়ে। মনিকা শোনেননি। প্রথম দিকে, বন্ধুর বাড়ি ঘুরতে যাচ্ছি বলে লুকিয়ে অনুশীলন করতে যেতেন। পরে বাড়িতে সব জানান। তাঁর কথায়, ‘‘বাড়িতে বলেছিলাম, আমি রেফারি হব। যদি তোমরা না মানেো তা হলে আমাকে হয়তো বাড়ি ছাড়তে হবে।’’ মেয়ের জেদের কাছে হার মেনেছিলেন বাবা-মা। এখন অবশ্য তাঁরা গর্বিত।

তাঁদের মেয়ের এখন লক্ষ্য ফিফার ‘এলিট’ রেফারির স্বীকৃতি পাওয়া। রাজ্য রেফারি সংস্থার (সিআরএ) সচিব চিত্তরঞ্জন দাস মজুমদার বলেন, ‘‘এর আগে বাংলা তো দূরের কথা, ভারতের কোনও মহিলা ফিফার এলিট রেফারির স্বীকৃতি পাননি। আমাদের আশা, মনিকা পারবে।’’

মালয়েশিয়ায় ফিফার ‘এলিট’ রেফারি নির্বাচনের পরীক্ষা হবে। ভারত থেকে যাচ্ছেন দু’জন। মনিকা ছাড়া রয়েছেন তামিলনা়ড়ুর এক মহিলা রেফারি। সেই পরীক্ষার শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিতে সাতাশ বছরের মনিকা এখন ওড়িশায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement