আবর্জনা: বাগনান বিডিও অফিসের পাশে বুঝে গিয়েছে নিকাশি নালা। ছবি: সুব্রত জানা
প্রাথমিক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বছর কয়েক আগে। কিন্তু তারপর সব চুপ। বাগনান পুরসভা তৈরির প্রক্রিয়া এখনও বিশ বাঁও জলে।
২০১১ সালের গোড়ায় বাম সরকারের আমলে রাজ্য পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর থেকে বাগনানে পুরসভা গঠনের জন্য খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। বাগনান ১, বাগনান ২ এবং খালোড় এই তিনটি পঞ্চায়েতকে নিয়ে পুরসভা গঠনের কথা হয়। ওই তিনটি পঞ্চায়েতকে চিঠি লিখে বিষয়টি জানানো হয়। তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেও বাগনানকে পুরসভা হিসেবে তৈরির কথা ঘোষণা হয়েছিল। সেই প্রস্তাবের ফাইল যায় রাজভবনে। তারপর রাজভবনের পক্ষ থেকে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাগনান ১, বাগনান ২ এবং খালোড় পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দাদের থেকে বাগনান পুরসভা হলে তাঁদের কোনও আপত্তি আছে কি না জানতে চাওয়া হয়। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত এইসব প্রক্রিয়া চলে। তারপর এই নতুন পুরসভা গঠন নিয়ে সেভাবে কোনও সরকারি উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
ট্রেন এবং সড়কপথে বাগনান থেকে কলকাতা-সহ বিভিন্ন এলাকায় সহজে যাতায়াত করা যায়। তাই বাগনানের জনসংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। বাগনান শহরের বিস্তারও ঘটছে দ্রুত। হাওড়া ও হুগলির বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষজন এই শহরে এসে জমি কিনে বাড়ি করছেন। তৈরি হয়েছে অনেক বহুতল আবাসন। জনসংখ্যা বাড়ার জন্য বাড়ছে গৃহস্থালির বর্জ্য। পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় সেই বর্জ্য সংগ্রহ এবং সাফাইয়ের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। পঞ্চায়েত এলাকা হওয়ায় নিকাশি ব্যবস্থা নিয়েও সমস্যা রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নতুন বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম হচ্ছে। কারণ, এই বিষয়ে পঞ্চায়তের হাতে যেমন কড়া আইন নেই। যেটুকু রয়েছে সেটা প্রয়োগের ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। যত্রতত্র বাড়ি তৈরির ফলে কয়েকটি নিকাশি নালা বন্ধই হয়ে গিয়েছে। বাগনান বাসস্ট্যান্ড, বেড়াবেড়িয়া, এনডি ব্লক প্রভৃতি জায়গায় বর্ষার সময়ে জল জমে থাকে। পঞ্চায়েতের টাকা না থাকায় নতুন নিকাশি নালা তৈরি করা যাচ্ছে না। বাগনান থানা নাগরিক কমিটির পক্ষে প্রসূন রায়, প্রাক্তন শিক্ষক বিভাস সামন্ত, সংস্কৃতিকর্মী রতনকুমার ঘোষেদের মতে, শহর বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নাগরিক সমস্যা। সেই সমস্যা পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় মিটবে না। একমাত্র পুরসভা গঠন হলেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।
পুরসভা তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েও থমকে গেল কেন? পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তার দাবি, কেন্দ্রীয় সরকার এখন পুরসভাগুলির জন্য বরাদ্দ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে নতুন পুরসভা তৈরি হলে তার আর্থিক দায় অনেকটাই রাজ্য সরকারকে নিতে হবে। তাই বাগনানকে পুরসভা ঘোষণার ক্ষেত্রে আপাতত ‘ধীরে চলো’ নীতি নেওয়া হয়েছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এখন পঞ্চায়েতগুলি চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন, আইএসজিপি-সহ বিভিন্ন খাতে টাকা পায়। তাই পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় এলাকার উন্নতি করা এখন অনেক সহজ।’’
বাগনানের বিধায়ক অরুণাভ সেন জানান, বাগনানে পুরসভা গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাবটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘আমি পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সঙ্গে আমি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। ওই দফতর থেকে আমাকে জানানো হয়েছে, বাগনানকে সঠিক সময়ে পুরসভা হিসাবে ঘোষণা করা হবে।’’