জমি-জটে আটকে বাগনান-আমতা রেল প্রকল্প

আটটি স্তম্ভ তৈরি করেই থমকে প্রকল্প

রেল সূত্রের খবর, তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলান্যাসের দিনই ঘোষণা করেন প্রকল্পের জন্য যাঁরা জমি দেবেন জমির দাম ছাড়াও তাঁদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে।

Advertisement

নুরুল আবসার

বাগনান শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:২৮
Share:

অসমাপ্ত: পড়ে রয়েছে তৈরি হওয়া স্তম্ভ। ছবি: সুব্রত জানা।

জমি মেলেনি। তবে প্রকল্পের শিলান্যাসের পরই কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল পুরনো অধিগৃহীত জমিতে। কিন্তু কিছুটা কাজ এগোতেই বোঝা যায়, জমি মেলা এতটা সহজ নয়। ফলে ছ’মাস পরই দাঁড়ি পড়ে যায় কাজে। সেই থেকে থমকেই রয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের বাগনান-আমতা
রেল প্রকল্প।

Advertisement

রেল দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আটের দশকের তৎকালীন রেলমন্ত্রী গনি খান চৌধুরীর আমলে প্রথম পরিকল্পনা হয়েছিল এই রেল প্রকল্পের। রেল কর্তৃপক্ষের যুক্তি ছিল, হাওড়া-খড়্গপুর বিভাগের আন্দুল ও বাগনান স্টেশনের মধ্যবর্তী জায়গায় কোনও কারণে রেল চলাচলে সমস্যা হলে হাওড়া-আমতা রেলপথ ধরে ট্রেনগুলিকে প্রথমে আমতায় আনা হবে। সেখান থেকে বাগনান হয়ে ট্রেন চলে যেতে পারবে খড়্গপুর পর্যন্ত।

২০০৯ সাল নাগাদ তৎকালীন ইউপিএ সরকারের রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এই পরিকল্পনা প্রকল্পের রূপ পায়। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে প্রকল্পটিতে অনুমোদন দেয় রেল বোর্ড। ঠিক হয়, আমতা থেকে বাগনান পর্যন্ত রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ১৬ কিলোমিটার। ফতেপুর এবং হারোপে হবে দুটি হল্ট স্টেশন। প্রকল্পটির জন্য খরচ ধরা হয় ১৯৫ কোটি টাকা। ২০১০ সালের ১০ জানুয়ারি তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমতায় এসে প্রকল্পটির শিলান্যাস করেন।

Advertisement

রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রকল্পের জন্য ১৬৮ একর জমির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শিলান্যাসের দিন পর্যন্ত এক ছটাক জমিও রেলের হাতে আসেনি। তাতে অবশ্য কাজ আটকায়নি। বাগনানে রেলের হাতে অধিগৃহীত যে জমি ছিল সেখানে মোরাম ফেলে শুরু হয় কাজ। দামোদরের বুকে সেতু তৈরির জন্য সেচ দফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে আটটি স্তম্ভ করা হয়। শিলান্যাসের পর থেকে ছয় মাস ধরে এইটুকু কাজ করার পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। আর এই কাজের জন্য খরচ হয় মোট প্রকল্প ব্যয়ের তিন শতাংশ বা প্রায় ছয় কোটি টাকা। আর তারপর থেকেই বন্ধ কাজ।

কিন্তু জমি-জট হল কী করে?

রেল সূত্রের খবর, তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শিলান্যাসের দিনই ঘোষণা করেন প্রকল্পের জন্য যাঁরা জমি দেবেন জমির দাম ছাড়াও তাঁদের পরিবারের একজনকে চাকরি দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, রেল নিজেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। চাকরি পাওয়ার আশায় জমিদাতাদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। দেখা যায়, এই ১৬৮ একর জমি ৮২৯টি ছোট প্লটে বিভক্ত। তাতেও আবার মালিকানা নিয়ে রয়েছে বিস্তর গোলমাল। এই জটিলতা নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর এবং ২৩ নভেম্বর দুটি পর্যায়ে রেলের তরফ থেকে জমি সংক্রান্ত তথ্য তুলে দেওয়া হয় রাজ্য ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের হাতে। রেল কর্তৃপক্ষের ‌অভিযোগ, তারপর থেকে জমি সমস্যার সমাধান মেলেনি।

হাওড়া জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর সূত্রে অবশ্য স্পষ্ট জানানো হয়েছে, রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি হল কোনও প্রকল্পের কাজে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে রাজ্য সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে। সেই অনুমোদন না আসায় জমি অধিগ্রহণের কাজে হাত দেওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কর্তারা।

দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সঞ্জয় ঘোষ বলেন, ‘‘পুরো জমি হাতে না আসা পর্যন্ত কাজ শুরু হবে না।’’ তবে প্রকল্পটি বাতিল করাও হয়নি, আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement