ফেসবুকে অভয়-বার্তা, সঙ্গে মোবাইল নম্বরও

‘জগৎবল্লভপুর থানা এলাকায় থাকি। এখানকার মেয়েদের বাড়ি ফিরতে কোনও অসুবিধা হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন’।— রবিবার সকালে ফেসবুকে এই ‘পোস্ট’ করেছেন জগৎবল্লভপুরের পাতিহালের যুবক সঞ্জু মল্লিক। তিনি হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্যও। সঙ্গে নিজের ফোন নম্বরও দিয়েছেন।

Advertisement

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

অভয়বাণী ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সঙ্গে সাহায্যের ফোন নম্বরও।

Advertisement

‘জগৎবল্লভপুর থানা এলাকায় থাকি। এখানকার মেয়েদের বাড়ি ফিরতে কোনও অসুবিধা হলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করুন’।— রবিবার সকালে ফেসবুকে এই ‘পোস্ট’ করেছেন জগৎবল্লভপুরের পাতিহালের যুবক সঞ্জু মল্লিক। তিনি হাওড়া জেলা পরিষদের সদস্যও। সঙ্গে নিজের ফোন নম্বরও দিয়েছেন। বিকেলের মধ্যে ওই পোস্টের ১৬টি ‘শেয়ার’ হয়েছে। ৩০০টি ‘লাইক’ পড়েছে। ৭৫ জন ‘কমেন্ট’ করেছেন। প্রতিটিতে প্রশংসার বন্যা।

প্রায় একই ধরনের ‘পোস্ট’ করেছেন উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার বাসিন্দা আশানুর খান। বিকেল পর্যন্ত ১১ জন ‘কমেন্ট’ করেছেন। ৭১টি ‘লাইক’ পড়েছে। এখানেও ‘কমেন্টে’ উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা। হায়দরাবাদ-কাণ্ডের পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় গ্রামীণ হাওড়ার মহিলাদের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন আরও অনেক সাধারণ মানুষ। কিছু সতর্কবার্তার সঙ্গে সে উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের কর্তারা। অনেক পুলিশকর্তাই মনে করছেন, এতে উপকার-ই হবে। পুলিশের দরকার ঘটনার দ্রুত খবর পাওয়া। সে ক্ষেত্রে কেউ যদি পুলিশকে খবর দিয়ে সতর্ক করেন, সেটা ভাল। তবে, তাঁরা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না-নেন, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।

Advertisement

কিন্তু কেন এটা করছেন সঞ্জু, আশানুররা?

সঞ্জু বলেন, ‘‘হায়দরাবাদ-কাণ্ড আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে মহিলাদের নিরাপত্তা কী অবস্থায় রয়েছে। প্রতিটি কোণায় পুলিশের পক্ষে সময়ে পৌঁছনো সম্ভব নয়। ফলে, মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ মানুষকে। তাঁদের পাশে থাকার কার্যকর আশ্বাস দিতে হবে। আমি সেটাই করেছি।’’ আশানুরের কথায়, ‘‘সামাজিক অবক্ষয় যে পর্যায়ে এসেছে, তাতে মহিলাদের নিরাপত্তায় ফেসবুকের সহায়তাও নিতে হচ্ছে। আমি মনে করি এটা কোনও অন্যায় নয়। তবে, যাঁরা এই ধরনের পোস্ট করছেন, তাঁদের অনুরোধ, তাঁরা যেন কেউ আইন নিজের হাতে তুলে না নেন। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করেন। প্রশাসনকে সাহায্য করাই যেন সকলের উদ্দেশ্য হয়।’’

কোনও বিপদে পড়ে মহিলারা ফোন করলে তাঁরা কী করবেন?

সঞ্জু বলেন, ‘‘প্রথমে থানায় জানাব। মুখ্যমন্ত্রীর হেল্পলাইন নম্বরেও ফোন করব। প্রয়োজনে একাই পৌঁছে যাব মহিলার কাছে। তাঁকে ন‌িরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেব।’’ একই বক্তব্য আশানুরেরও। তিনি বলেন, ‘‘এটা পুলিশকে চ্যালেঞ্জ করা নয়, পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করা। পুরুষ হিসাবে মহিলাদের আশ্বাস দিতে চাই যে, আমরা আছি। আপনারা সম্পূর্ণ নিরাপদ। নিরাপত্তার কোনও অভাব বোধ করলেই আমাকে ফোন করুন। পুলিশকে জানিয়ে আমি আপনার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ব।’’

পুলিশ কূী করছে? রাস্তাঘাটে মহিলাদের নিরাপত্তা তো পুলিশের দেখার কথা! গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার দাবি, ‘‘মহিলাদের নিরাপত্তা বা তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ হলে তা অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হয়। সেই ব্যবস্থা হায়দরাবাদ-কাণ্ডের অনেক আগে থেকেই আছে।’’

জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, প্রতি মাসে পুলিশ সুপার যে ‘ক্রাইম কনফারেন্স’ করেন, তাতে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ কতটা হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হয়। প্রতিটি হাসপাতালে রাখা ‘সোর্স’রা নিগৃহীত মহিলার খবর থানায় পৌঁছে দেন। গড়চুমুক, গাদিয়াড়ার মতো পর্যটনকেন্দ্রে ছুটির দিনে সাদা পোশাকের পুলিশ থাকে। কলেজগুলির সামনে টহল চলে। প্রতি মাসে এক-একটি থান‌া এলাকায় গড়ে চারটি করে স্কুলে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছাত্রীদের সচেতন করা হয়। প্রতিটি থানায় ডিউটি অফিসারদের বলা থাকে মহিলারা কোনও অভিযোগ করতে এলে তা যে ওসি-আইসি-দের সঙ্গে সঙ্গে জানানো হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement