চুঁচুড়ার ঘড়ির মোড়ে বিক্ষোভ আশাকর্মীদের। ছবি: তাপস ঘোষ
পরিশ্রম এবং দায়িত্ব যতটা, পারিশ্রমিক বা সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন নেই। ফলে, উত্তরোত্তর ক্ষোভ বাড়ছে আশাকর্মীদের (অ্যাক্রেডিটেড সোশ্যাল হেল্থ অ্যাকটিভিস্ট)। বেতন বাড়ানো, স্বাস্থ্যকর্মীর মর্যাদা-সহ নানা দাবিতে সোমবার হুগলি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের (সিএমওএইচ) দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখালেন তাঁরা। সিএমওএইচ এবং জেলাশাসকের দফতরে স্মারকলিপি দেওয়া হল।
এ দিন এআইইউটিইউসি প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ আশাকর্মী ইউনিয়নের ডাকে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে আশাকর্মীরা চুঁচুড়ার খাদিনা মোড়ে জড়ো হন। সেখান থেকে মিছিল করে ঘড়ির মোড়ে আসেন। তাঁদের হাতে ছিল ব্যানার, প্ল্যাকার্ড।
ঘড়ির মোড়ের কাছে প্রথমে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পরে অবশ্য সিএমওএই দফতর পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি মেলে। সেখানে মাইকে আশাকর্মীরা ক্ষোভ উগরে দেন। দফতরে ঢোকার মুখে অনেকে মাটিতে বসে পড়েন।
আন্দোলনকারীদের দাবি, তাঁদের সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীর মর্যাদা এবং ন্যূনতম ২১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে। পিএফ, ইএসআই এবং সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অতিরিক্ত সময় কাজ করানো চলবে না। কাজের সময়সীমা ৮ ঘণ্টা বেঁধে দিতে হবে। দফতর বহির্ভূত অন্যান্য কাজ তাঁদের দিয়ে করানো চলবে না। অসুস্থতা বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে কেউ ছুটিতে থাকলে পারিশ্রমিক কেটে নেওয়া যাবে না। কর্মরত অবস্থায় কোনও আশাকর্মীর মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারের এক জনকে কাজ দিতে হবে। আরও নানা দাবি জানানো হয় স্মারকলিপিতে।
মহিলাদের অভিযোগ, ঝড়-বৃষ্টি, শীত-গ্রীষ্ম সব সময়েই দিন-রাত তাঁরা মাঠেঘাটে ঘুরে কাজ করেন। অথচ, তাঁদের জীবনযাপন নিয়ে সরকার বিন্দুমাত্র ভাবিত নয়।
আশাকর্মীদের বক্তব্য, গ্রামবাসীদের, বিশেষ করে প্রসূতি ও শিশুদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়ার কাজ তাঁদের করতে হয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের কাজও করতে হয়। আরও অনেক বাড়তি কাজের বোঝা তাঁদের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অসুস্থতা বা দুর্ঘটনার কারণে কাজ করতে না-পারলে ছুটি মঞ্জুর না-করে পারিশ্রমিক কেটে নেওয়া হয় বলেও তাঁদের অভিযোগ।
এক আশাকর্মীর ক্ষোভ, ‘‘সমকাজে সমবেতনের তত্ব আমাদের ক্ষেত্রে খাটে কই! হামেশাই ১০-১২ ঘণ্টা খাটিয়ে নেওয়া হয়। অথচ না আছে স্বাস্থ্যকর্মীর মর্যাদা, না শ্রমিকের। নারীশ্রমিক বলে এই অসম্মান?’’ আরামবাগের আশাকর্মী মিনতি রায় বলেন, ‘‘আমার স্বামী ১০০ দিনের কর্মী। তেমন আয় নেই। সংসারটা আমার উপরে অনেকটা নির্ভর করে। তার উপরে ছেলের প্যারামেডিক্যাল কোর্সের খরচ আছে। যা পাই, তাতে কুলোতে পারছি না।’’
অনেকেরই বক্তব্য, লকডাউনের সময় গোটা সমাজ যখন করোনার ভয়ে তটস্থ হয়ে গৃহবন্দি, তখন তাঁদের বাড়ি বাড়ি ছুটে বেড়াতে হয়েছে, কার জ্বর-সর্দি হয়েছে জানতে। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা লোকজনের বাড়িতে গিয়েও সমীক্ষা চালাতে হয়েছে। এই সব কাজ করতে গিয়ে গ্রামবাসীর মুখঝামটাও কম সহ্য করতে হয়নি।
পাশাপাশি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিশুদের পালস পোলিয়ো খাওয়ানো, গর্ভবতীদের পরিষেবা দেওয়ার কাজও বজায় রেখেছেন তাঁরাই। এই ভাবে গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের রীতিমতো ভরসা যুগিয়েছেন তাঁরা। তাঁদের এই ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে প্রশাসনিক মহলেও। অথচ, সুযোগ-সুবিধার বেলায় তাঁরা রয়ে গিয়েছেন সেই তিমিরেই।’’