ষণ্ডযুদ্ধ: তখন লড়াই চরমে। নিজস্ব চিত্র
লড়াইটা অনিবার্যই ছিল। সেটাই হল।
এলাকা দখলের জন্য দেশে-দেশে লড়াই হয়। পড়শিদের মধ্যে ঝামেলা হয়। গুন্ডারা কেউ কাউকে ছাড়ে না। আর ওরা ছাড়বে?
ওদের লড়াইটা বিকেলের চায়ের দখলের জন্য। এ পা ঠোকে, তো ও গর্জায়! এ মাথা নাড়ে, তো ও তেড়ে যায়! এ সাদা। ও কালো।
বৃহস্পতিবার বিকেলে উত্তরপাড়া কোতরং বাজারের কাছে মুচিপাড়ায় দুই ষাঁড়ের পাক্কা সওয়া এক ঘণ্টার লড়াই অবশ্য অমীমাংসিত। কিন্তু সেই লড়াই দেখতে গিয়ে হাসপাতালে যেতে হল অন্তত পাঁচ জনকে। আর বেশির ভাগ গোলমালে যা হয়, এ ক্ষেত্রেও তা-ই হল। পুলিশ আসার আগেই দুই ‘দুষ্কৃতী’ পগার পার!
মুচিপাড়া সাদা ষাঁড়টির নিজের এলাকা। এখানেই সে বেশির ভাগ সময় ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন বিকেলে এখানকার একটি চায়ের দোকানের ফেলে দেওয়া চা-পাতা খেতে আসে। কালো ষাঁড়টিকে ওই এলাকায় দেখা যায় মাঝেমধ্যে। এলাকার লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে সে আগে এসে ওই দোকানের চা-পাতা খেয়ে পাশেই শুয়ে ছিল। ফলে, সাদা ষাঁড়টি এসে নিজের ‘হকের চা’ পায়নি। মুহূর্তে তার মেজাজ তিরিক্ষি। সে সরাসরি আক্রমণ করে বসে জাত-ভাইকে। তার পরেই লড়াই শুরু!
এই লড়াইয়ে যুযুধান দু’পক্ষের কেউ অবশ্য জখম হয়নি। দু’পক্ষের শিংয়ের খটাখট, তুমুল ধুলোর ঝড় তোলা, হুঙ্কার দেখতে মুহূর্তে ভিড় জমে চারপাশে। সাইকেল, রিকশা, মোটরবাইক, টোটো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য ওই ভিড়ই লড়াই থামাতে উদ্যোগী হয়। কেউ বালতি করে জল ছুড়তে থাকেন। কেউ পটকা ফাটান। তাতেও তেজ কমেনি দুই ষাঁড়ের।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এলাকাবাসী পুলিশ ও দমকলে খবর দেন। কিন্তু তারা আসার আগেই ষাঁড় দু’টি নিজেরাই রণে ভঙ্গ দেয়। আর তখনই বিপত্তি। তারা ছুটে পালানোর সময়ে শিংয়ের গুঁতোয় জখম হন চার জন। রাজা দাস নামে এক যুবক পড়ে গেলে একটি ষাঁড়ের পা পড়ে তাঁর পেটে। তাঁর অবস্থাই গুরুতর। তাঁকে উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সে কী লড়াই! কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না! এক ঘণ্টা লড়াই চলে। আচমকা ষাঁড় দু’টো ছুটতে শুরু করাতেই বিপত্তি হয়।’’
মফস্সলের রাস্তায় আচমকা ‘বুল ফাইট’ দেখে মজা পেয়েছেন অনেকে। কিন্তু আতঙ্কের চোরাস্রোতও রয়েছে। আবার দুই ষাঁড়ের লড়াই হবে না তো! তাই একটিকে প্রশাসন নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাক, এমনটাই চাইছেন এলাকাবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, লিখিত দরখাস্ত জমা পড়লে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
ষাঁড় ধরা তো আর পুলিশের কাজ নয়!