বাধা: আটকানো হয়েছে বালিভর্তি ট্রাক্টর। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ
দ্বারকেশ্বর নদের বৈধ বালিখাদ থেকে ট্রাক্টরে বালি তুলে একই চালানে কাছের অবৈধ খাদ থেকেও সারাদিন বালি তোলা হচ্ছে।
বালি চুরির এই নতুন কৌশল নিয়ে অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার দুপুরে আরামবাগ মহকুমা ভূমি দফতরের এক কর্তা এবং আধিকারিকেরা অভিযানে গিয়ে লরি ও ট্রাক্টরের মালিক-চালকদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন। তাঁদের হেনস্থাও করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনাটি ঘটে ভাটার মোড় এলাকায়। ছ’টি ট্রাক্টর আটক করলেও পরিস্থিতি দেখে তা ছেড়ে দিয়ে ফিরতে হয় ভূমি-আধিকারিকদের। সঙ্গে পুলিশ ছিল না।
মহকুমা ভূমি দফতরের বিশেষ রাজস্ব আধিকারিক (২) সৌরভ রক্ষিত ওই অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘দেখা গিয়েছে, একটি চালান সকালে কাটা হচ্ছে। সেই চালানে সারাদিন ধরে বালি বওয়া হচ্ছে। অভিযান চলাকালীন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে কিছু লোক জমায়েত হয়ে সরকারি কাজে বাধা দিল। ওই ভাবে ব্যবসা করতে দিতে হবে দাবি জানিয়ে নানা কটূক্তি করে তারা। বিষয়টা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’ কিন্তু অভিযানে সঙ্গে পুলিশ ছিল না কেন? সৌরভবাবু বলেন, ‘‘বালি চুরির এই নতুন প্রবণতা নিয়ে প্রথমে নিজেরা নিশ্চিত হতেই পুলিশে জানানো হয়নি। তবে এটা রুখতে জোরকদমে অভিযান চালানো হবে।”
এ দিন বিক্ষোভে শামিল ট্রাক্টর-মালিকদের মধ্যে কাঁটাবনি গ্রামের মহম্মদ আমিরউদ্দিন বলেন, “একই চালানে কেউ কেউ একাধিকবার বালি তুলছে, এটা অস্বীকার করছি না। ভূমিকর্তারা সরাসরি নদীর চরে গিয়ে তাদের হতেনাতে ধরুক। নইলে প্রমাণ হবে কী করে? সকাল ৯টায় বালি বোঝাই করার পর আমার ট্রাক্টর খারাপ হতে পারে। চালককে হোটেলে খেতে যেতে হতে পারে। রাস্তায় আটক করে সন্দেহের ভিত্তিতে এই জুলুম নিয়েই আমাদের আপত্তি।”
কেন এ দিন ছ’টি বালি বোঝাই ট্রাক্টর আটক করা হল?
মহকুমা ভূমি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্বারকেশ্বর নদ সংলগ্ন আরামবাগ-বর্ধমান রোডের ভাটার মোড় এবং সংলগ্ন সুজলপুরে বালি বোঝাই লরি এবং ট্রাক্টরগুলির চালান খতিয়ে দেখছিলেন সৌরভবাবুরা। তখনই তাঁদের নজর পড়ে দু’কিলোমিটার দূরের দ্বারকেশ্বর নদের বৈধ বালিখাদ থেকে ট্রাক্টরগুলিতে বালি বোঝাই করার পর চালান কাটা হয়েছে সকাল ৯ টায়। সেখান থেকে ট্রাক্টরটি যেখানে কয়েক মিনিটের মধ্যে আসার কথা, সেখানে ওই জায়গায় আসতে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছে। কেন এত সময় লাগল, তার কোনও সদুত্তর ট্রাক্টর-মালিক বা চালকেরা দিতে পারেননি বলে ভূমি দফতরের দাবি।
তবে, একই চালানে সারাদিন ধরে বালি চুরির বিষয়টি নতুন নয় বলে দাবি বৈধ বালিখাদ-মালিকদের। তাঁরা জানান, আগে দু’এক জন ঝুঁকি নিয়ে এই অবৈধ কাজ করত। এখন এই কৌশলে দেদার বালি চুরি হচ্ছে। ভূমি দফতর থেকে তাঁদের বালি তোলার চালান দেওয়া হয়। তাঁরা আবার বালি ব্যবসায়ীদের লরি-ট্রাক্টরপিছু বালির পরিমাণ মোতাবেক চালান দেন। সেই চালানে বালি তোলার সময়, বালির পরিমাণ, গাড়ির নম্বর ইত্যাদি লেখা থাকে। কিন্তু তা যথাযথ খতিয়ে দেখার মতো পরিকাঠামো ভূমি দফতরের নেই। সেই ফাঁকেই চুরি বাড়ছে বলে তাঁদের দাবি।