ফের উত্তপ্ত হাওড়া, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা 

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় শনিবার থেকে অশান্তি শুরু হয়েছিল হাওড়ায়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উনসানিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের গাড়িতে, বাসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:২৩
Share:

উত্তপ্ত: বাঁকড়ায় বিক্ষোভকারীদের হটাতে পুলিশবাহিনী। সোমবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতাকে কেন্দ্র করে সোমবার সপ্তাহের শুরুর দিনেই ব্যাপক গোলমাল হল হাওড়ার বাঁকড়া-আমতা রোডে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের এ দিন দফায় দফায় কার্যত খণ্ডযুদ্ধ চলে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় বোমা। ভাঙচুর চলে পুলিশের গাড়ি, লরি ও বাসে। বিক্ষোভকারীদের পিছু হটাতে দফায় দফায় কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। তবে এ দিন বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে আসা লোকজনকেও বিরোধিতার প্রকাশ-ভঙ্গিমার সমালোচনা করতে শোনা যায়। এ দিকে এ দিনও হাওড়ায় ২৪ ঘণ্টার জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।

Advertisement

নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায় শনিবার থেকে অশান্তি শুরু হয়েছিল হাওড়ায়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উনসানিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের গাড়িতে, বাসে। রবিবার পরিস্থিতি আপাত ভাবে শান্তই ছিল। এ দিন ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দুপুর ১টা নাগাদ। পুলিশ জানায়, এ দিন প্রথমে বাঁকড়া, হাওড়া-আমতা রোডের উপরে দফায় দফায় অবরোধ হয়। স্থানীয় কবরপাড়া এলাকায় অবরোধ তুলতে পুলিশ এক সময়ে লাঠি চালায়। তখন বিক্ষোভকারীরা সরে যেতে বাধ্য হন। কিন্তু পরিস্থিতি এর পরে কার্যত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাঁকড়া থেকে প্রথম দফায় অবরোধকারীরা হটে যাওয়ার পরে বিকেল ৩টে নাগাদ হাওড়ার অঙ্কুরহাটি এলাকা থেকে বিরাট মিছিল বাঁকড়া মোড়ে এসে যোগ দেয়। দু’টি জায়গা মিলে প্রায় ছ’-সাত হাজার মানুষ সলপ মোড়ের কাছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে জড়ো হন নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরোধিতায়। এর কিছু পরেই শুরু হয়ে যায় জাতীয় সড়ক অবরোধ। খবর পেয়ে হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা বিশাল বাহিনী, র‌্যাফ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছন। এই সময়ে হাওড়া-আমতা রোড অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

Advertisement

বিকেল ৫টা নাগাদ ফের বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া শুরু করেন। তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ, র‌্যাফ মিলে এর পরে দফায় দফায় লাঠি চালায়। কয়েক দফায় পুলিশকে কাঁদানে গ্যাসও ছুড়তে হয়। এ সবের জেরে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। পুলিশ জানায়, অঙ্কুরহাটির ওই মিছিলটি ডোমজুড়ের ভিতর দিয়ে এসেছিল। রাস্তা আটকে পড়তে পারে এই আশঙ্কা থেকেই জাতীয় সড়ক ধরে মিছিলটিকে আসতে দেওয়া হয়নি। ইট পড়ার পরেই পুলিশ যখন লাঠিচার্জ করে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে ধাওয়া করে, তখনই আশপাশের কয়েকটি বহুতল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়া শুরু হয়। এক ঘণ্টা কার্যত তাণ্ডব চলে কবরপাড়া অঞ্চলে। পুলিশের একটি গাড়ি, একটি বাস ও দু’টি লরিতে ভাঙচুর হয়।

এক সময়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাস্তায় নেমে পড়েন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বও। বাঁকড়া ২ নম্বর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান মেহের আলির কথায়, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিল হওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পিত ভাবে সেখানে বাইরের কিছু লোক ঢুকে পড়ে এত বড় ঘটনা ঘটিয়েছে। পুলিশকে মারধর করা হয়েছে। কেউ আমাদের কথা শুনতে চাননি।’’ ওই এলাকার আশপাশেই দোতলা অঞ্চল থেকে বহিরাগতেরা মিছিলে ঢুকে ওই ঘটনা ঘটিয়েছে বলেই দাবি মেহের আলির। যদিও এলাকার লোকজনের দাবি, ওই মিছিলে প্রথমে তৃণমূলের পতাকা উড়তেও দেখা গিয়েছিল। পরে অবশ্য বিক্ষোভকারীরা জাতীয় পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখান।

বাঁকড়ায় বস্ত্রশিল্পের বাজার রয়েছে। ঘটনাকে ঘিরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দেওয়া আসগর আলি, জয় মল্লিকদের কথায়, ‘‘শান্তিপূর্ণ মিছিল হবে শুনে যোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু এ কী নোংরামি! এমন তাণ্ডব হবে বুঝতে পারিনি।’’

এ দিন রাত পর্যন্ত ওই বিক্ষোভস্থলে শুধুই ভাঙা কাচ, কাঁদানে গ্যাসের জ্বলে যাওয়া শেল পড়ে থাকতে দেখা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement