প্রতীকী ছবি।
এ বারই প্রথম নয়!
ভুয়ো ক্লাবের নামে সরকারি অনুদান ‘হাতিয়ে’ নেওয়ার ঘটনা ঘিরে তোলপাড় শুরু হয়েছে হুগলিতে। কিন্তু এমন ঘটনা আগেও ঘটেছে আরামবাগ মহকুমায়। গত তিন বছরে শুধু গোঘাটেই পাঁচটি ভুয়ো ক্লাব চিহ্নিত করে তাদের অনুদান পাওয়া তিনি বন্ধ করে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বিধায়ক মানস মজুমদার।
এ বার আরামবাগের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবপল্লির যে ভুয়ো ক্লাবের (নবপল্লি মাঠপাড়া সম্প্রীতি সঙ্ঘ) নামে অনুদানের চেক গত ১১ এপ্রিল স্থানীয় তৃণমূল নেতা নীতীশ ভট্টাচার্য থানা থেকে সই করে নিয়ে যান বলে অভিযোগ, তার কী হবে?
বুধবার হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে। বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে রিপোর্ট হাতে পাব। তারপরেই নির্দিষ্ট করে সব কিছু বলা যাবে।’’ আরামবাগের বিধায়ক কৃষ্ণচন্দ্র সাঁতরা বলেন, “আমরা চাইব, স্বচ্ছতা আসুক। দুর্নীতি প্রমাণ হলে এতদিন ধরে ওই ভুয়ো ক্লাবের নামে যে অনুদান উঠেছে, তার পুরো টাকাটাই ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
এক লক্ষ টাকার ওই চেক এখনও তাঁর কাছে আছে, নাকি তিনি ভাঙিয়েছেন— নীতীশের থেকে এ দিনও এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএসেরও জবাব দেননি।
২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বহু ক্লাবকে খেলাধুলোর মানোন্নয়নের জন্য অনুদান দিচ্ছে রাজ্য সরকার। প্রথম থেকেই এই ‘খয়রাতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিরোধীরা। বহু ভুয়ো ক্লাবের নামে সেই টাকা হাতানো হয়েছে, এমন অভিযোগও শোনা গিয়েছিল।
গোঘাটের বিধায়ক মানসবাবু মানছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশ্য মহৎ। কিন্তু যাঁদের তিনি এই দায়িত্ব দিয়েছেন, সেই আমরাই যদি জল ঢেলে দিই, তিনি আর কী করবেন? ক্লাবকে অনুদান দিতে বিধায়ক, সাংসদ বা মন্ত্রীর সই দরকার। আমরা যদি খতিয়ে না
দেখে সই করে দিই, তা হলে এই সমস্যা তো হবেই।”
মানসবাবু জানান, যে পাঁচটি ভুয়ো ক্লাবের অনুদান পাওয়া তিনি আটকেছেন, সেগুলির কোনও ঘর ছিল না। খেলাধুলোর সঙ্গেও কোনও যোগ ছিল না। ছিল না কোনও সামাজিক কার্যকলাপও। বিধায়কের দাবি, ‘‘গত বছর কুমারগঞ্জের বেলুন গ্রামের একটি ভুয়ো ক্লাবের তৃতীয় বছরের অনুদান পাওয়া বাতিল করি। আগের দু’বছরের মোট ৩ লক্ষ টাকা ফেরত দিতে হয় ওই ভুযো ক্লাবের কর্মকর্তাকে।’’ সেই কর্মকর্তা যে তাঁর দলেরই, তা-ও মেনছেন বিধায়ক।
বিরোধীরা প্রথম থেকে এই আশঙ্কাই করেছিলেন। তাঁরা দাবি করেছিলেন, যে ভাবে শংসাপত্রের বিনিময়ে ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, তাতে আখেরে তৃণমূল নেতাদের একাংশের পকেটেই ওই টাকা যাবে।
ঘটনাচক্রে, নীতীশও তৃণমূল নেতা। কার সুপারিশে ভুয়ো ক্লাবের নামে তিনি অনুদানের চেক তুললেন, সে উত্তর এখনও পাওয়া যায়নি। অনুদান পাওয়া ক্লাবের নামের তালিকা কী করে বাইরে এল, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। লকডাউন পরিস্থিতিতে বহু সংগঠন বা ব্যক্তি যেখানে ঝুঁকি নিয়ে সেবামূলক কাজ করে চলেছেন, সেখানে এই সময়ে ক্লাবগুলিকে অনুদান বিলির নিন্দা করে আরএসপি-র জেলা সম্পাদক মৃণ্ময় সেনগুপ্ত জেলাশাসককে চিঠি দিয়েছেন।