বালিপুর বাজারে ভাঙচুর হওয়া দোকান। —নিজস্ব চিত্র।
খানাকুলের বালিপুর বাজারে দু’টি দোকানে ভাঙচুর এবং মালিকদের মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। শনিবার দুপুরের ঘটনা। ব্যবসায়ীদের একাংশের অভিযোগ, ‘তোলা’ না-মেলায় এবং তাঁরা বিজেপির লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা করছেন, এই সন্দেহে ওই হামলা।
গোটা বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক অশান্তির জেরে প্রায়ই তাঁদের ব্যবসা মার খাচ্ছে। সীমন্ত মান্না এবং পীযূষ সাধুখাঁ নামে প্রহৃত দুই ব্যবসায়ীর প্রাথমিক চিকিৎসা হয়। দু’জনেরই দাবি, তাঁদের সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তাঁরা শান্তিতে ব্যবসা করতে চান। এই ঘটনায় তাঁরা আতঙ্কিত।
বাজার কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য শেখ গোলাম নবির নেতৃত্বে হামলা হয়। অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম নবির দাবি, ‘‘আমাকে মিথ্যা অভিযোগে জড়ানো হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘যে বা যারাই ওই ঘটনা ঘটিয়ে থাকুক, দল না দেখে পুলিশ তদন্ত করে কড়া ব্যবস্থা নিক।’’ একই দাবি বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি বিমান ঘোষেরও।
ঘটনার কথা পুলিশের কানেও পৌঁছেছে। হুগলি গ্রামীণ জেলা পুলিশের আধিকারিকেরা জানান, ঘটনাটি নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। তবে, সন্ধ্যা পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ হয়নি। লিখিত অভিযোগ জমা পড়লে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হবে। সীমান্ত এবং পীযূষ বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয়টা দিনের আলোয় হয়েছে। অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারে ব্যবসায়ী সমিতি সিদ্ধান্ত নেবে।’’
বাজার কমিটির সম্পাদক শ্রীকান্ত সামুইয়ের অভিযোগ, এমনিতেই এ বার করোনা আবহে ব্যবসা লাটে ওঠার অবস্থা। তার উপরে সারা বছর নানা রাজনৈতিক অশান্তির কোপ পড়ছে বাজারে। কখনও তোলাবাজি, কখনও নিজেদের মধ্যে অশান্তির জেরে বাজারে গুলি-বোমার লড়াই চলে। এখন কে কোন দল করেন, সেই সন্দেহ করেও মারধর-ভাঙচুর চলছে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা সুষ্ঠু ভাবে যাতে ব্যবসা করতে পারি, তা নিয়ে পুলিশকে জানিয়েছি। রাজনৈতিক নেতাদের কাছেও অনুরোধ করেছি। কিন্তু কিছু হয়নি।’’
মুণ্ডেশ্বরী নদীর ধারে শতাব্দী প্রাচীন বালিপুর বাজারে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৭০০ দোকান আছে। আশপাশের তাঁতিশাল, বালিপুর, অরুন্ডা পঞ্চায়েত এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মানুষ এই বাজারের উপরে নির্ভরশীল। ব্যবসায়ীদের দাবি, অতীতে প্রতিদিন গড়ে ৬০-৭০ লক্ষ টাকার লেনদেন হত। আলুর মরসুমে তা এক কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত। তাঁদের খেদ, বছর দশেক ধরে প্রায়ই বাজারে রাজনৈতিক অশান্তি ছড়াচ্ছে। তার জেরে ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে।