নজরে: গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখছেন পুলিশ কমিশনার হুমায়ূন কবির-সহ চন্দননগর কমিশনারেটের অন্য আধিকারিকেরা। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
চিত্র ১: বিকেল হতেই জমজমাট চন্দননগর স্ট্র্যান্ড জনশূন্য হয়ে গেল বৃহস্পতিবার। ঝাঁপ ফেলে বাড়ির পথে পা বাড়ালেন দোকানি। সন্ধ্যায় গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা বন্ধ করল প্রশাসন। জেলার ২১টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকার মধ্যে পড়েছে চন্দননগর স্ট্র্যান্ড।
চিত্র ২: উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার রামহরি মিত্র লেনও ‘গণ্ডিবদ্ধ’ হয়েছে। কিন্তু এ দিন লকডাউন জারি হওয়ার বেশ কিছুক্ষণ পরেও সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশকে অবাধে রাস্তায় ঘুরতে দেখা গেল। স্থানীয় এক চিকিৎসক বলেন, ‘‘কিছু মানুষ অকারণেই রাস্তায় মাস্ক ছাড়াই ঘুরছেন। শুধু ছোট এলাকা গণ্ডিবদ্ধ করলে চলবে না। পুলিশ-প্রশাসনকে এ দিকেও নজর দিতে হবে। না হলে এই পদক্ষেপ মাঠে মারা যাবে।’’
জেলার গণ্ডিবদ্ধ এলাকাগুলিতে লকডাউনের পরে এ দিন এমন মিশ্র চিত্র উঠে এসেছে। যদিও প্রশাসনের দাবি, মোটের উপর ২১টি গণ্ডিবদ্ধ এলাকাতেই লকডাউন মেনে চলছেন এলাকাবাসী। এ দিন বিভিন্ন শহরে গণ্ডিবদ্ধ এলাকা ঘুরে দেখেন সিপি হুমায়ুন কবীর-সহ চন্দননগর কমিশনারেটের অন্য আধিকারিকরা। সিপি-র দাবি, ‘‘বিকেল থেকেই পুলিশ রাস্তায় ছিল। অপ্রয়োজনে যাঁরা বেরিয়েছেন, তাঁদের ঘরে ঢোকানো হয়েছে। কঠোর ভাবে স্বাস্থ্যবিধি পালনে পুলিশ সক্রিয়।’’
মাসখানেক আগে চন্দননগরের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের উর্দিবাজারে অনেকে করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন। ওই এলাকা নিয়ে প্রশাসন এ বারেও সতর্ক। চন্দননগরের মহকুমাশাসক মৌমিতা সাহা, পুর-কমিশনার স্বপন কুণ্ডু, এসিপি-১ পলাশ ঢালি উর্দিবাজার-সহ শহরের চারটি গণ্ডিবদ্ধ এলাকা পরিদর্শন করেন। পুর-কমিশনার বলেন, ‘‘মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। কাউকে বাড়ি থেকে বেরোতে হবে না। বাড়ি বাড়ি ভ্যানে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ তবে, শহরের গণ্ডিবদ্ধ একটি এলাকার বাসিন্দা অরবিন্দ ধাড়া বলেন, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে এমন লকডাউনে কতটা ভাল হবে তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে। এক সঙ্গে বড় এলাকা ধরে করলে তার একটা মানে হত।’’
রিষড়ার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এনএস রোড এলাকার একটি গলির একাংশ গণ্ডিবদ্ধ এলাকার তালিকায় পড়েছে। প্রায় ১০০ মিটার ওই চৌহদ্দিতে প্রায় দু’শো মানুষের বাস। এ দিন বিকেলে এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, ওই অংশ বাঁশ, কার্ডবোর্ড এবং পুলিশের গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। বাসিন্দাদের সতর্ক করতে মাইকে প্রচার করছেন পুলিশকর্মীরা। পুর-প্রশাসক বিজয়সাগর মিশ্রের আশ্বাস, ‘‘বাড়িতে বসে নিত্য-প্রয়োজনীয় জিনিস পেতে কোনও অসুবিধা হবে না। পুরসভা ব্যবস্থা করবে।’’
সিঙ্গুরের বোড়াই-পহলমপুর পঞ্চায়েতের বোড়াই, কমলাপুর ও পশ্চিমপুর, মির্জাপুর-বাঁকিপুর পঞ্চায়েতের জগৎনগর, উত্তর মামুদপুর, জলাঘাটা, চণ্ডীতলা-২ ব্লকের বেলেডাঙ্গা, থানা থেকে বিডিও কার্যালয় পর্যন্ত অংশও গণ্ডিবদ্ধ। এলাকার অনেকেই সকাল থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে দোকানে ভিড় করেন। সকালে শেওড়াফুলির এপি আঢ্য লেনের বাসিন্দা সহদেব দাস মুদি দোকানে লাইন দিয়েছিলেন। বললেন, ‘‘সব কিছু ঠিকঠাক মিলবে কিনা জানি না। দুশ্চিন্তা থেকেই আগেভাগে অন্তত এক সপ্তাহের সামগ্রী কিনে রাখছি।’’ গণ্ডিবদ্ধ নয়, এমন এলাকার মানুষকেও বেশি করে আনাজ বা মুদিখানার সামগ্রী কিনতে দেখা গিয়েছে।
শ্রীরামপুর পুরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা কো-অর্ডিনেটর নিতাই গুহ বলেন, ‘‘এলাকা স্যানিটাইজ় করা হয়েছে। গার্ডরেল দিয়ে রাস্তা ঘেরা হয়েছে। কিন্তু আর কী কী করতে হবে জানি না। কোনও নির্দেশিকা পাইনি।’’