বাঁধনের ক্ষত। —নিজস্ব চিত্র।
পেটের যন্ত্রণায় ছটফট করায় চন্দননগরের বড়বাজারের একটি নার্সিংহোমে বেঁধে রাখা হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব এক ব্যক্তির হাত-পা। সেই বাঁধনে তাঁর পায়ে দগদগে ঘা এবং হাতে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে। ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে নালিশ জানিয়েছে শোভন সাঁধু নামে চুঁচুড়ার তোলাফটকের বাসিন্দা, ওই রোগীর পরিবার। জেলা স্বাস্থ্য দফতর এবং প্রশাসনের কাছেও অভিযোগ জানানো হয়েছে। শোভনবাবু এখন চুঁচুড়ার মল্লিক কাশেম হাট এলাকার একটি নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখা হচ্ছে।’’
শোভনবাবু বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। পরিবারের লোকেরা জানান, পেটের সমস্যা নিয়ে তাঁকে গত ২৩ ডিসেম্বর চন্দননগরের ওই নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। নিয়ম অনুযায়ী সেখানে তাঁর করোনা পরীক্ষা হয়। রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। তখন আইসিইউ-তে রেখে চিকিৎসা শুরু হয়। সেখানেই কয়েক দিন তাঁর হাত-পা দড়ি দিয়ে কষে বেঁধে রাখা হয়েছিল বলে অভিযোগ। বিলের অঙ্ক বাড়তে থাকায় গত ২ জানুয়ারি তাঁকে সেখান থেকে চুঁচুড়ার হসপিটাল রোডের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে আসেন বাড়ির লোকেরা। সেখানে করোনার র্যাপিড টেস্টে রিপোর্ট ‘পজ়িটিভ’ আসে। করোনা চিকিৎসার জন্য ওই রাতেই তাঁকে মল্লিক কাশেম হাটের একটি নার্সিংহোমে সরানো হয়। পরের দিন সকালে স্বাস্থ্যকর্মীরা লক্ষ্য করেন, পায়ে দগদগে ঘা। এক হাতে রক্ত জমাট
বেঁধে রয়েছে।
শোভনবাবু জানান, চন্দননগরের নার্সিংহোমে দড়ি দিয়ে হাত-পা বেঁধে রাখায় এই অবস্থা হয়েছে। নার্সিংহোমের তরফে বিষয়টি তাঁর বাড়িতে জানানো হয়। বৃহস্পতিবার তাঁর স্ত্রী কাকলিদেবী স্পিড পোস্ট মারফত মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অভিযোগপত্র পাঠান। শুক্রবার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মহকুমাশাসকের (সদর) দফতরে অভিযোগপত্র জমা দেন। কাকলিদেবীর ক্ষোভ, ‘‘চিকিৎসার এ কেমন নমুনা? চিকিৎসা করাতে গেলাম পেটের, অথচ পায়ে বিশ্রী ক্ষত হয়ে গেল! হাতে জমাট বাঁধা রক্ত। স্বামী দিন দশেক ওখানে ভর্তি ছিল। প্রথম কয়েক দিন ওই ভাবে বেঁধে রাখা হয়েছিল। আইসিইউ-তে ঢুকতে না পারায় আমরা বুঝতে পারিনি। ওই নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ করোনা এবং পেটের রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি শোভনবাবুর পায়ের ক্ষতস্থান সারিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে মল্লিক কাশেম হাটের নার্সিংহোমটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
চন্দননগরের নার্সিংহোমটির পক্ষে দাবি করা হয়েছে, বেদনাদায়ক অসুস্থতা নিয়ে কোনও রোগী ভর্তি হলে চিকিৎসার প্রয়োজনে তাঁর হাত-পা শয্যার সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। যাতে কোনও ভাবে পড়ে গিয়ে বড় ধরনের বিপদ না ঘটে। এ ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে তারও চিকিৎসা করা হয়।