প্রতীকী ছবি।
অনাদেয় টাকা আনতে গিয়ে ঋণগ্রহীতা এক মহিলাকে হেনস্থা ও নিগ্রহের অভিযোগ উঠল ক্ষুদ্র ঋণদানকারী (মাইক্রো-ফিনান্স) একটি সংস্থার দুই এজেন্টের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার হুগলির গুড়াপের কাংসারিপুর গ্রামে ওই ঘটনায় শোরগোল পড়ে। ওই সংস্থার কার্যালয় এবং গুড়াপ থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। ঋণমুক্তি কমিটির সদস্যেরা বিক্ষোভে শামিল হন। সংশ্লিষ্ট সংস্থা এবং পুলিশের আশ্বাসে রাতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গুড়াপের একটি মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থার দুই এজেন্ট বৃহস্পতিবার দুপুরে কংসারিপুরের ঋণগ্রহীতা রূপালি লোহারের বাড়িতে যান। ওই পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত থাকায় এই মুহূর্তে টাকা দিতে অপারগ বলে জানালে ওই দু’জন রূপালিকে গাললিগালাজ ও নিগ্রহ করেন। বিষয়টি জানাজানি হতে গ্রামবাসী ওই সংস্থার কার্যালয় ঘেরাও করেন।
দাবি ওঠে, সংশ্লিষ্ট দুই এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ঋণ শোধের টাকা আদায় করতে ভবিষ্যতে ঋণগ্রহীতার বাড়িতে যাওয়া চলবে না। ঋণ আদায়ের জন্য গ্রামের কোনও নির্দিষ্ট জায়গায় বৈঠক করতে হবে। একই দাবিতে রাত পর্যন্ত গুড়াপ থানাতেও বিক্ষোভ চলে। শেষে ওই সংস্থার তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বিভিন্ন মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থার বক্তব্য, গত কয়েক মাসে গ্রামবাসীদের ঋণ পরিশোধের বিষয়ে অনীহা মারাত্মক ভাবে বেড়েছে। সংস্থার কার্যালয়ে দেখা করতে বললেও তাঁরা তা করছেন না। সেই কারণেই এজেন্টের সঙ্গে ঋণগ্রহীতাদের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটছে।
করোনা পরিস্থিতিতে ধনেখালি, পোলবা, বলাগড়ে ঋণগ্রহীতা অনেক পরিবার রাজ্য সরকারের কাছে ঋণমুক্তির দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাঁদের বক্তব্য, গ্রামে বিভিন্ন স্বনিযুক্তি প্রকল্প বন্ধের মুখে। ফলের, মহিলাদের রোজগার নেই। স্বাভাবিক কারণেই তাঁরা ঋণ শোধ করতে পারছেন না। কিন্তু ঋণদানকারী সংস্থার লোকেরা বাড়িতে গিয়ে বার বার তাগাদা দিচ্ছেন। তাতে নানা সময়ে দু’পক্ষের অশান্তিও হচ্ছে।
গ্রামবাসীদের দাবিকে সামনে রেখেই সিপিআই (এমএল) লিবারেশন ‘ঋণমুক্তি কমিটি’ তৈরি করেছে। ঋণ মকুবের দাবিতে তারা বিভিন্ন সরকারি দফতরে স্মারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের তরফে এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি বলে তাদের আক্ষেপ। লিবারেশনের রাজ্য নেতা সজল অধিকারী বলেন, ‘‘প্রান্তিক মানুষদের সত্যিই ঋণ শোধের উপায় নেই। সরকারের তরফে মাইক্রো-ফিনান্স সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে ঋণ মকুবের ব্যবস্থা করা উচিত। বড় বড় শিল্পপতিকে করোনা পরিস্থিতিতে ঋণ ছাড় দেওয়া হল। প্রান্তিক মানুষের জন্য সরকার কিছু করবে না?’’