প্রতীকী চিত্র।
কলকাতা পারল। কিন্তু পিছিয়ে পড়ল হাওড়া।
বাতাস বিষিয়ে গিয়েছে দু’টি শহরেরই। কোন উৎস থেকে কতটা দূষণ হচ্ছে কলকাতা ও হাওড়ার বাতাসে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তা মাপার কথা ছিল একসঙ্গেই। এই গ্রীষ্মে কলকাতায় সে কাজ হল ঠিকই। কিন্তু হাওড়া পারল না। ওই কাজের প্রয়োজনীয় অনুমতি তিন মাসেও দিয়ে উঠতে পারেনি হাওড়া পুরসভা।
অথচ এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কলকাতায় যন্ত্র বসিয়ে বায়ু পরীক্ষা করা হয়েছে। রাসায়নিক বিশ্লেষণের জন্য সেই নমুনা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে নাগপুরে নিরি (ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট)-র গবেষণাগারে। নিরি ও পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যৌথ ভাবে এই কাজ করছে।
হাওড়া শহরের তিনটি জায়গায় মনিটরিং স্টেশন বা যন্ত্র বসিয়ে ওই কাজ করার কথা ছিল। সেগুলি হল ঘুসুড়ি পাম্পহাউস, বেতড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাওড়া পুরসভা ভবন। সেই জন্য নিরি ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ হাওড়া পুরসভার কাছে অনুমতি চেয়ে তিন মাস আগেই লিখিত আবেদন করে। কিন্তু তার উত্তর আজও আসেনি বলে পর্ষদ ও নিরি জানাচ্ছে।
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভাকে বারবার বলা হয়েছে। আমি নিজে মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু ওঁরা সাড়া দিলেন না।’’ হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘নির্দিষ্ট ভাবে যে তিনটি জায়গা মনিটরিং স্টেশনের জন্য চাওয়া হয়েছিল, মনে হয় সেগুলি নিয়ে আমাদের কিছু সমস্যা আছে। পাশের কোনও জায়গা চাইলে সমস্যা হত না।’’ নিরি-র এক কর্তা বলেন, ‘‘পুরসভা আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ করেনি। ওঁরা যদি বলতেন, ওই তিনটি জায়গা নিয়ে অসুবিধে আছে, তা হলে অবশ্যই অন্য জায়গার কথা ভাবা যেত।’’
কল্যাণবাবুর আক্ষেপ, ‘‘একটা গুরুত্বপূর্ণ মরসুমে হাওড়ায় বায়ু দূষণের উৎস মাপার কাজ করা গেল না। এটা বিরাট ক্ষতি।’’ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সূত্রের দাবি, সমস্যার মূলে মেয়রের সঙ্গে বরো চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরদের একাংশের বিরোধ।
নিরি-র বক্তব্য, অনেক হয়েছে। নভেম্বরের শেষে শুরু হবে শীত মরসুমে দূষণের উৎস পরিমাপের কাজ। তখন মনিটরিং স্টেশন বসাতে তারা আর হাওড়া পুরসভার উপর নির্ভর করবে না, বেসরকারি জায়গার কথাই বিবেচনা করা হবে।
পর্ষদও পুরসভার উপর ভরসা না করে কলেজ, স্কুলের ছাদে যন্ত্র বসাবে বলে ভাবছে। তবে ওই কাজের জন্য চার পাশে অনেকটা খোলা জায়গার দরকার, যাতে বায়ুপ্রবাহ কোনও ভাবে বাধা না পায়। তেমন জায়গা বাছতে এ বার রীতিমতো কাঠখড় পোড়াতে হবে পর্ষদ এবং নিরি-কে।
দু’টি সংস্থাই জানাচ্ছে, কলকাতার ছ’টি জায়গা— মৌলালি, শ্যামবাজার, ডানলপ, মিন্টো পার্ক, চেতলা ও বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলিতে যন্ত্র বসাতে পুরসভার অনুমতি পেতে সমস্যা হয়নি।