প্রতীকী চিত্র।
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে হাওড়ার জেলার ৮৮৪টি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠন-পাঠন শুরু হওয়ার কথা। জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকের অফিস থেকে প্রাথমিক স্কুলগুলিকে নির্দেশও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শিক্ষাবর্ষ চালু হওয়ার কথা থাকলেও জেলার ৮৮৪টি স্কুলে এখনও পর্যন্ত কোনও ছাত্র-ছাত্রীই পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হয়নি।
কারণ হিসাবে প্রধান শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণিতে পঠন-পাঠন চালু করতে গেলে যে সব বিশেষ ব্যবস্থা করা দরকার সেই সংক্রান্ত গাইডলাইন তাঁদের দেওয়া হয়নি। তার ফলেই স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়াদের ভর্তি-প্রক্রিয়া তাঁরা শুরু করেননি।
এই পরিস্থিতিতে অভিভাবকরা পড়েছেন দোটানায়। তাঁরা অনেকে হাইস্কুলেই ছেলেমেয়েদের ভর্তি করিয়ে দিচ্ছেন। প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়ে কেউ কেউ আবার অপেক্ষা করছেন কবে থেকে প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয় তার জন্য।
কী করলে প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু করা যাবে?
শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, প্রথমত সরকারি রেজিস্টার, যাতে পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াদের নাম নথিভুক্ত থাকবে। দ্বিতীয়: পুস্তক তালিকা। যাতে জানা যাবে কোন বই সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হবে এবং কোন বই বাইরে থেকে কিনতে হবে। সর্বোপরি বিস্তারিত ‘গাইড লাইন’ যাতে সব খুঁটিনাটি দেওয়া থাকবে।
প্রধান শিক্ষকদের বক্তব্য, সপ্তাহখানেক আগে তাঁদের ডেকে বিভিন্ন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকরা (এসআই) মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে তাঁদের স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠন-পাঠন চালু হবে। সেটি তাঁরা যেন অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়ে দেন। একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তাঁরা এসআই-এর কাছে নির্দিষ্ট গাইডলাইন চান। তাঁদের বলা হয় খুব শীঘ্রই গাইড লাইন দিয়ে দেওয়া হবে। তারপর থেকে এসআই-দের তরফ থেকে আর কিছুই বলা হয়নি।
আমতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, তিনি অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করেন। তাঁরা এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তি করাতে রাজি হয়ে যান। ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘রোজ এসে অভিভাবকেরা জানতে চাইছেন কবে থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি শুরু হবে? কিন্তু সরকারি গাইডলাইন না আসায় আমাদের হাত পা বাঁধা। ভর্তির ফর্ম ছাপতে দিয়েও আনিনি।’’
বাগনানের একটি প্রাথমিক স্কুলও চলছে হাইস্কুলের বাড়িতেই। এই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘আমাদের অনেক ছাত্রী হাইস্কুলেও ফর্ম পূরণ করেছে। আমরা তাদের ট্রান্সফার সার্টিফিকেট দিইনি, আমাদের স্কুলেই যাতে তারা ভর্তি হয়। কিন্তু আমরা যদি এখনও পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্রদের ভর্তি করাতে না পারি তারা তো হাইস্কুলে যাবেই?’’
বিভিন্ন হাইস্কুলে ইতিমধ্যেই পঞ্চম শ্রেণিতে ছাত্র ভর্তি শুরু হয়ে গিয়েছে। পাঁচলার একটি হাইস্কুল সংলগ্ন চারটি প্রাথমিক স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু হয়েছে। কিন্তু ওই চারটি স্কুলের বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ওই চারটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের আশঙ্কা এরপরে তাঁরা ছাত্র ভর্তি শুরু করলেও পড়ুয়া পাবেন না। ছবিটি সারা জেলার।
ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রেন্ড প্রাইমারি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের রাজ্য সভাপতি তথা আমতার একটি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পিন্টু পাড়ুই বলেন, ‘‘এমনিতে এমন বহু স্কুলকে পঞ্চম শ্রেণিতে পঠন-পাঠনের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে যাদের পরিকাঠামোগত ঘাটতি আছে। সেটা না হয় মেনে নেওয়া গেল। কিন্তু পঠন-পাঠন শুরুর বিস্তারিত গাইডলাইন তো দিতে হবে। সেটা না হলে বিষয়টি তো প্রহসনে পরিণত হবে।’’
রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান মানিক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘হাওড়ার জেলা প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকের সঙ্গে কথা বলব।’’
আমতা-১ ব্লকের সিরাজবাটি চক্রের স্কুল পরিদর্শক দীপঙ্কর কোলে বলেন, ‘‘যে সব স্কুলে পঞ্চম শ্রেণি চালু করার কথা হয়েছে তাদের নিয়ে আমরা বৈঠক করেছিলাম। কয়েকজন প্রধান শিক্ষক পরিকাঠামোগত কিছু অসুবিধার কথা বলেছেন। এই রিপোর্ট আমরা জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে পাঠিয়েছি। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত না আসা পর্যন্ত কোনও স্কুলে পঠন-পাঠনের অনুমতি দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না।’’