সুরক্ষিত: বর্মবস্ত্র পরে মশার লার্ভা মারার ওষুধ স্প্রে করছেন পঞ্চায়েতের কর্মী। কানাইপুরে। —নিজস্ব িচত্র
একে করোনায় রক্ষে নেই। উঁকি দিচ্ছে ডেঙ্গিও।
দুই জেলাতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে বাড়ছে। ভরা বর্ষার মরসুমে এর সঙ্গে ডেঙ্গির সাঁড়াশি রুখতে তৎপর হল প্রশাসন। জোর দেওয়া হয়েছে মশার লার্ভা মারতে ওষুধ স্প্রে করা, নর্দমায় গাপ্পি মাছ ছাড়া, জঞ্জাল সাফাইয়ে। শুরু হয়েছে বাড়ি বাড়ি জ্বরের তথ্য সংগ্রহের কাজও। উপসর্গ থাকলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পুর এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মীরা ওই কাজ করছেন। গ্রামীণ এলাকায় আশাকর্মী বা ‘ভিলেজ রিসোর্স পার্সন’রা। এ জন্য তাঁদের প্রয়োজনীয় পিপিই দেওয়া হয়েছে।
প্রশাসনের হিসেবে, গত জানুয়ারি মাস থেকে ২৪ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গি আক্রান্তের নিরিখে রাজ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে হুগলি জেলা। সর্বাধিক ১১২ জন আক্রান্ত উত্তর ২৪ পরগনায়। হুগলিতে এই সংখ্যা ৬২। তার পরে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা (৬১), নদিয়া (৪৫), হাওড়া (৩৪) এবং মালদহ (২৩)। তবে, আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে পরিস্থিতি এখনও উদ্বেজনক নয় বলেই দাবি করেছে হাওড়া ও হুগলি জেলা প্রশাসন।
হুগলি জেলা প্রশাসনের দাবি, গত ৪ সপ্তাহে এই জেলায় ৩ জনের ডেঙ্গি হয়েছে। দু’জন শ্রীরামপুরের। এক জন মগরায়। প্রত্যেতেই চিকিৎসকের পরামর্শে বাড়িতে থেকেই সেরে উঠেছেন। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী জানান, করোনা এবং ডেঙ্গি রোধে পরিকল্পনামাফিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পুর এলাকায় পুরসভার স্বাস্থ্যকর্মী এবং গ্রামে আশাকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে বলা হয়েছে। হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ভবানী দাস বলেন, ‘‘গত বছর এই সময়ে ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।’’
প্রশাসন সূত্রের খবর, গত ২৯ জুন রাজ্যের ডেঙ্গি প্রতিরোধ বিষয়ক কোর গ্রুপের বৈঠক হয় মুখ্যসচিব রাজীব সিংহের নেতৃত্বে। মুখ্যসচিব নির্দেশ দেন, ডেঙ্গি রোধে শহর এবং গ্রামীণ এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে জোর দিতে হবে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তমতো জেলাশাসকদের নির্দেশিকা পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, কোথাও ডেঙ্গি হলে এবং মশা ডিম পাড়তে পারে, এমন সম্ভাব্য জায়গায় দ্রুত অভিযান চালাতে হবে। জঞ্জাল সাফাই, নিকাশি ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে করতে হবে। খানাখন্দ বা অন্যত্র জল যাতে না জমে, তা ফের স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। নির্মাণকাজ যেখানে চলছে সেখানেও নজর রাখতে বলা হয়। শুক্রবার হুগলির সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতিতে ওই নির্দেশিকা পাঠিয়ে যথাযথ ভাবে তা পালনের কথা বলা হয়েছে জেলা পরিষদের তরফে।
গত কয়েক বছরে হুগলিকে ডেঙ্গি ভালই ভুগিয়েছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, শুধুমাত্র বর্ষার সময় ডেঙ্গি মোকাবিলার কাজে নামলে পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হয়। সেই কারণে সারা বছর ধরেই এই কাজ চলছে। বর্ষা নামায় কাজে জোর দেওয়া হয়েছে। কোনও ফাঁকফোকর যাতে না-থাকে, তা নিশ্চিত করতে তদারকি করা হচ্ছে।
এর মধ্যে শ্রীরামপুর-উত্তরপাড়া ব্লকের কানাইপুর পঞ্চায়েতে অন্তত ১৫ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। এক জনের মৃত্যুও হয়েছে। প্রধান আচ্ছালাল যাদব বলেন, ‘‘করোনার জন্য স্যানিটাইজ়েশনের পাশাপাশি মশার লার্ভা মারতে তেল স্প্রে করা হচ্ছে। কর্মীরা পিপিই পরে কাজ করছেন। সাফাইয়ের কাজও চলছে নিয়ম মেনে।’’ গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ বলেন, ‘‘কর্মীদের সুরক্ষায় কোনও আপস করা হচ্ছে না।’’
হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকেই বর্ষার মরসুম শুরুর আগে ডেঙ্গি মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ফলে, সেই পরিকাঠামো প্রস্তুত আছে। কর্মসূচি বিষয়েও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরা অবহিত। ফলে, ডেঙ্গি প্রতিরোধ কর্মসূচি নিতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে না। ডেঙ্গির ক্ষেত্রে প্রতি বছর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে গ্রামে ও শহরে প্রচার চলে। এ বারে করোনা আবহের জন্য সেই প্রচার সামাজিক মাধ্যমে চালানো হবে বলে জানান মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক।