নির্বাচনের মুখে গোলমালে রাশ টানতে আরামবাগ মহকুমাজুড়ে ব্যাপক চোলাই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ-প্রশাসন। গত শুক্রবার অভিযান শুরুর প্রথম দিনেই কেন্দ্রীয় বাহিনী, পুলিশ ও আবগারি দফতরের মিলিত অভিযানে আরামবাগ-গোঘাট-খানাকুল এবং পুড়শুড়া ব্লকের বিভিন্ন গ্রামে প্রায় ২০ হাজার লিটার চোলাই নষ্ট করা হয়েছে। খানাকুলের মাড়োখানা অঞ্চলের বহুবাজার থেকেই উদ্ধার হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার লিটার চোলাই। ধ্বংস করা হয়েছে মদ তৈরির সরঞ্জাম।
মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার বসু বলেন, “এলাকায় বিশৃঙ্খলা এড়াতে চোলাই উচ্ছেদ অভিযানে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সন্দেহজনক গাড়ি দেখলে আটক করা হচ্ছে। তাতে আপত্তিকর মালপত্র থাকলে বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে।”
পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে খবর, মহকুমায় বিভিন্ন নির্বাচনকালীন অপরাধমূলক বা হিংসাত্মক নানা ঘটনার পিছনে সিংহভাগ ক্ষেত্রেই সহজলভ্য মাদক সেবনের নজির মিলেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে সহজলভ্য চোলাই।এমনকী ভোট উপলক্ষে মিটিং-মিছিলে লোক নিয়ে যাওয়ার জন্যও চোলাই তৈরির বরাত দেওয়ার নজির রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের। এমনিতে মহকুমার অধিকাংশ গ্রামে চোলাইয়ের ঠেক আছে। পুলিশ এবং আবগারি দফতরের হিসাবে মহকুমার চারটি থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে চোলাই তৈরির ভাটি আছে শ’তিনেক। কোথায়ও কোথায়ও তা রীতিমতো কুটির শিল্পের মাত্রা পেয়েছে। যেমন শুধু পুরশুড়ার রাউতাড়া গ্রাম সংলগ্ন আকবরী খালের দুপাড় জুড়ে ৪৫টি চোলাইয়ের ভাটি চলে। গোঘাটের মথুরা, দামোদরপুর, কানাইপুর, পশ্চিমপাড়া পুরশুড়ার ফুলপুকুর, নিমডাঙি, খানাকুলের নতিবপুর, মাড়োখানা, রাজহাটি, বন্দর, আরামবাগের সুজলপুর, বাতানল, গৌরহাটি বারোয়ারিতলা, গোঘাটের দামোদরপুর, কানাইপুর, পশ্চিমপাড়া ইত্যাদি বহু গ্রামে টোলাইয়ের ভাটির রমরমা কারবার। ওই সমস্ত ভাটি থেকে মহকুমার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও সংলগ্ন বর্ধমান, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন গ্রামে চোলাই পৌঁছে যায়।
আরামবাগ আবগারি দফতরের দাবি, তাঁরা সারা বছর ধরেই চোলাই উচ্ছেদ অভিযান চালালেও পরিকাঠামোর অভাবে এলাকাগুলিতে নিয়মিত নজরদারি সম্ভব হয় না। ফলে উচ্ছেদ অভিযান হলেও দিন কয়েক পরে অনেক ক্ষেত্রে ফের আগের অবস্থাই ফিরে আসে।