এই গ্রাম বাঁচে এখনও উত্তমকুমারকে ঘিরে

প্রবীণরা ভুলতে পারেন না গ্রামের রাস্তায় মহানায়কের প্রাতর্ভ্রমণ, শ্যুটিংয়ে ফাঁকে স্কুলের অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া, কত কী! তাই গ্রামবাসী চাইছেন মহানায়কের স্মৃতি জড়ানো জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখুক সরকার। গ্রামটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পড়ে তোলা হোক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

জগৎবল্লভপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০১৭ ০৯:০০
Share:

স্মৃতি: এই বাড়ি উত্তমকুমারের স্মৃতিবিজড়িত। নিজস্ব চিত্র

বছর গড়াচ্ছে। কিন্তু স্মৃতি ফিকে হচ্ছে না।

Advertisement

আজ, সোমবার মানুষটির ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। এখনও জগৎবল্লভপুরের গোহালপোতার প্রবীণ মানুষদের কাছে অমলিন তাঁর স্মৃতি। তিনি—উত্তমকুমার।

প্রবীণরা ভুলতে পারেন না গ্রামের রাস্তায় মহানায়কের প্রাতর্ভ্রমণ, শ্যুটিংয়ে ফাঁকে স্কুলের অনুষ্ঠানে অতিথি হওয়া, কত কী! তাই গ্রামবাসী চাইছেন মহানায়কের স্মৃতি জড়ানো জায়গাটিকে স্মরণীয় করে রাখুক সরকার। গ্রামটিকে পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পড়ে তোলা হোক।

Advertisement

এই গ্রামেরই সত্যনারায়ণ খান কলকাতায় সিনেমা পরিবেশনার ব্যবসা করতেন। সেই সূত্রে মহানায়কের সঙ্গে সখ্য গড়ে উঠেছিল সত্যনারায়ণবাবুর। তাঁর সংস্থা পরিবেশিত বহু ছবির আউটডোর শ্যুটিং সত্যনারায়ণবাবু করিয়েছেন গোহালপোতায়। ‘ধন্যি মেয়ে’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’, ‘অপরিচিত’, ‘হার মানা হার’, ‘বনপলাশির পদাবলী’র মতো বহু ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই গ্রামে। উত্তমকুমার শ্যুটিং করতে এলে যাতে তাঁর থাকার কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য তিনতলা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা যুক্ত বাড়ি তৈরি করেছিলেন সত্যনারায়ণবাবু। বাড়িটির এখন ভগ্নদশা। সত্যনারায়ণবাবুর বড় পুত্রবধু মৃদুলা খান বলেন, ‘‘দোতলায় আমার ঘরটি উত্তমকুমারের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। আমার জন্য একটি বড় রেডিও কিনেছিলেন শ্বশুরমশাই। তাতে মন দিয়ে খবর শুনতেন উত্তমকুমার।’’

গ্রামবাসীরা বেশির ভাগই চাষাবাদে যুক্ত। মহিলারাও নিতান্তই ছোপোষা। কিন্তু মহানায়কের নাম শুনলেই সকলে এখনও কপালে হাত ঠেকান। দিনের পর দিন তাঁকে কাছ থেকে দেখার স্মৃতি রোমন্থন করেন। তাঁদেরই একজন কৃষ্ণ বাগ। ৭০ ছুঁই ছুঁই পেশায় চাষি কৃষ্ণবাবু শুধু যে উত্তমকুমারকে সামনে থেকে দেখেছেন তাই নয়, ‘বনপলাশীর পদাবলী’ ছবিতে তিনি অতিরিক্ত অভিনেতা হিসেবে একটি দৃশ্যে মহানায়কের সঙ্গে অভিনয়ও করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘কী আভিজাত্য ছিল তাঁর মধ্যে! বড় মনের মানুষ ছিলেন।’’

গত বছর ৩ সেপ্টেম্বর মহানায়কের জন্মদিনে জগৎবল্লভপুর ব্লক সংস্কৃতি মঞ্চের উদ্যোগে গ্রামে একটি সভা হয়। কয়েকশো গ্রামবাসী সেখানে পর্যটনকেন্দ্র গড়ার দাবি তোলেন। সংস্কৃতি মঞ্চের সভাপতি আশিস দাসের খেদ, ‘‘পর্যটনকেন্দ্রের দাবি জানিয়ে আমরা জেলা পরিষদে চিঠি দিয়েছি। কোনও উত্তর পাইনি।’’ গ্রামের শিক্ষক, সৌমেন পাত্র বলেন, ‘‘কলকাতায় উত্তমকুমারের মৃত্যুদিনের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই হাজির হয়ে কতজনকে সংবর্ধনা দেন। অথচ, এই গ্রামটি পড়ে আছে অন্তরালে। সব কিছু শেষ হয়ে যাওয়ার আগে সরকারের কিছু করা উচিত। প্রয়োজনে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে যাব।’’

জেলা পরিষদের বন ও ভূমি এবং পর্যটনের ভারপ্রাপ্ত কর্মাধ্যক্ষ মানস বসু বলেন, ‘‘উত্তমকুমার যেখানে থাকতেন সেই বাড়িটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি। তাই আমরা ওই বাড়ির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে যা করণীয় করব।’’

অপেক্ষায় গ্রামবাসী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement