শিক্ষক: অন্য ভূমিকায়। নিজস্ব চিত্র
পুঁজি ছিল মাত্র ৬৬০ টাকা। ১৯৮০ সালে সেই পুঁজিতে সেলাই সরঞ্জামের ব্যবসা শুরু করে আরামবাগের হারাধন দে ওরফে বুলু এখন প্রায় কোটিপতি!
কিন্তু শুধু ব্যবসা বাড়িয়েই থামেননি শহরের আঢ্যপাড়ার বাসিন্দা, বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ়। নিজের কষ্টের অভিজ্ঞতা এবং মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে প্রায় নিঃখরচায় সেলাই প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দুঃস্থ পরিবারের মেয়েদের স্বনির্ভরতার পথ দেখাচ্ছেন তিনি।
শহরের পি সি সেন রোডে নিজের ব্যবসা-কেন্দ্রের কাছেই চলতি বছরের জানুয়ারিতে হারাধনবাবু খুলেছেন সেলাই প্রশিক্ষণের স্কুল। প্রায় নিখরচায় বুটিক-সহ হাতের কাজ, কাপড় কাটা থেকে সেলাই সব শেখানো হচ্ছে ছ’মাসে। প্রশিক্ষণ শেষে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের কিস্তিতে সেলাই মেশিন কিনে দেওয়ার এবং হাতের কাজ বিক্রি করে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন তিনি। প্রশিক্ষণ নিতে এসে তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন বলে জানিয়েছেন বন্দনা মালিক। জাগ্রতা রায়, সঞ্চিতা দাসের মতো শিক্ষার্থীরা।
হারাধনবাবু অল্প বয়সেই হারান বাবা গোপীনাথ দে’কে। মা দুলুরানিদেবী কয়েকটি বাড়িতে মুড়ি ভেজে সংসার চালাতেন। ১৯৮০ সালে তিনি ছেলেকে গুমটি বানিয়ে কিছু করার জন্য ১৬০ টাকা দিয়েছিলেন। হারাধনবাবুর কথায়, ‘‘সে দিন মা বলেছিলেন নিজে কিছু করো। তার পরে আরও ৫০০ টাকা দিয়েছিলেন। মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।’’
আর্থিক অনটনের কারণে দশম শ্রেণির পরে আর পড়াশোনা হয়নি হারাধনবাবুর। মায়ের কাছ থেকে টাকা পেয়ে প্রথমে কী করবেন ভেবে পাননি তিনি। শহরের যে সব দোকানে ফাইফরমাস খাটতেন, তার মধ্যে ছিল শহরের সবচেয়ে নামী দর্জির দোকানও। সেই দোকানের মালিক হিরা শেখের পরামর্শেই পি সি সেন রোডের সিনেমাতলায় নিকাশি নালার উপরে গুমটি বানান হারাধনবাবু। মায়ের নামে সেলাই-দোকানের নাম রাখেন ‘দুলুরানি টেলার্স’। তার পরে হিরা শেখের সঙ্গে কলকাতায় গিয়ে বোতাম-সুতো-হুক-চেন ইত্যাদি সেলাই সরঞ্জাম কিনে ব্যবসা শুরু করেন।
ছ’বছরেই ব্যবসার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। ওই গুমটি ছেড়ে কাছেই পাকা দোকানঘর ভাড়া নেন। সাহায্যের জন্য লোকও নিয়োগ করেন। এখন হারাধনের স্বপ্ন দুঃস্থ মহিলাদের স্বনির্ভর করা। এত দিন ধরে হারধানবাবুর উত্থান কাছ থেকে দেখে হিরা শেখ বলেন, ‘‘দুলু পরিশ্রমী। তাই এতটা করতে পেরেছেন। তিনি অতি সজ্জন এবং পরোপকারীও। কেউ সাহায্য চেয়ে তাঁর কাছ থেকে কখনও ফিরে যায়নি।’’ মানুষকে আজীবন সাহায্য করে যেতে চান হারাধনবাবু।