মিলেছে ১৫টি তাজা বোমা, দাবি পুলিশের
BJP

বন্‌ধে ধৃত বিজেপির ৬ নেতাকর্মী, বিক্ষোভ

এ দিন সকাল থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় বাগনান শহর। বেশিরভাগ দোকানপাট প্রথমে বন্ধই ছিল। পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় বেলার দিকে আরও কিছু দোকান খোলে।

Advertisement

নুরুল আবসার সুব্রত জানা

বাগনান শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩৭
Share:

ধুন্ধুমার: ১) থানার সামনে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি। ২)উদ্ধার হওয়া বোমা। নিজস্ব চিত্র।

দলীয় নেতা ‘খুনে’র প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ১২ ঘণ্টার বাগনান বন্‌ধ ডেকেছিল বিজেপি। কিন্তু তা শান্তিপূর্ণ হল না। বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল বের করতে গিয়ে গ্রেফতার হলেন বিজেপির ছয় নেতাকর্মী। পুলিশের দাবি, এক নেতার কাছ থেকে ১৫টি তাজা বোমা মিলেছে। ধৃতদের মুক্তির দাবিতে বাগনান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখায় গেরুয়া শিবির। বিক্ষোভকারীরা থানার গেট ভেঙে ফেলতেও উদ্যত হন বলে অভিযোগ। থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়েও বিক্ষোভ চলে। শেষমেশ লাঠি উঁচিয়ে পুলিশ বিক্ষোভ হটায়।

Advertisement

গত ২৪ অক্টোবর রাতে বেনাপুরের বাসিন্দা, পেশায় ফুল ব্যবসায়ী কিঙ্কর মাজি নামে ওই বিজেপি নেতাকে বাড়ির সামনেই গুলি করে দুষ্কৃতীরা। তিনি কলকাতার এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বুধবার দুপুরে মারা যান। পুলিশের দাবি, কিঙ্করের করোনা পজ়িটিভ হয়েছিল। তাতেই মৃত্যু। বিজেপি এ কথা মানেনি। তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা কিঙ্করকে খুন করে বলে তারা অভিযোগ তোলে। বন্‌ধ ডাকা হয় বৃহস্পতিবার।

এ দিন সকাল থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় বাগনান শহর। বেশিরভাগ দোকানপাট প্রথমে বন্ধই ছিল। পুলিশ নিরাপত্তার আশ্বাস দেওয়ায় বেলার দিকে আরও কিছু দোকান খোলে। পুলিশের দাবি, দোকান বন্ধ থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা অসুবিধার কথা জানানোয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

Advertisement

ন’টা নাগাদ বাগনানের রথতলায় বিজেপি নেতা প্রেমাংশু রানা কিছু কর্মী-সমর্থককে নিয়ে বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেই জমায়েতে হানা দেয়। প্রেমাংশু-সহ ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের দাবি, প্রেমাংশুর কাচে ১৫টি তাজা বোমা ছিল। তা উদ্ধার করা হয়েছে। ওই ছ’জনের বিরুদ্ধে করোনা আবহে বেআইনি জমায়েত, পুলিশের কাজে বাধা দেওয়া এবং বিস্ফোরক মজুত করা— এই তিন ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব এই সব অভিযোগ মনগড়া এবং সাজানো বলে দাবি করেছেন। তাঁদের পাল্টা অভিযোগ, প্রেমাংশুদের ওপর পুলিশ লাঠিও চালিয়েছে। পুলিশ সে কথা মানেনি।

এই ঘটনার কিছুক্ষণ পরেই বাগনানের তৃণমূল বিধায়ক অরুণাভ সেন বিশাল মিছিল করে থানায় গিয়ে ধৃত বিজেপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করার দাবি জানান। এ ক্ষেত্রে পুলিশ আটকায়নি বলে বিজেপির দাবি।

এর পরেই বাগনানে হাজির হন বিজেপি যুব মোর্চার রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ সৌমিত্র খান। পুলিশ তাঁকে প্রখমে ৬ নম্বর জাতীয় সড়কের লাইব্রেরি মোড়ে আটকায়। সৌমিত্রবাবু শান্তিপূর্ণ ভাবে থানায় গিয়ে পুলিশের পদস্থ কর্তাদের সাথে ধৃত দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি এবং খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতার নিয়ে আলোচনা করতে চান। পুলিশ তাঁকে থানায় যেতে অনুমতি দেয়। সৌমিত্রবাবু থানায় যেতেই প্রচুর বিজেপি কর্মী হাজির হন। ধৃতদের মুক্তির দাবি উঠে। পুলিশ থানার গেট বন্ধ করে দেয়। তাঁরা গেট ভেঙে ফেলতে উদ্যত হন বলে অভিযোগ। সৌমিত্রবাবু তাঁদের শান্ত হওয়ার আবেদন জানালেও কাজ হয়নি। তাঁরা থানার সামনে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ দেখান। বিজেপির অভিযোগ, বিক্ষোভ হটাতে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে এবং তাতে দলের এক মহিলা কর্মী আহত হয়েছে। পুলিশ লাঠি চালানোর কথা মানেনি।

থানা থেকে বেরিয়ে সৌমিত্রবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দলীয় কর্মীকে যারা খুন করল, তাদের না ধরে তৃণমূলের নির্দেশে দলের যাঁরা গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিবাদ করছেন, পুলিশ তাঁদের ধরছে। এটা চলতে পারে না। ধৃতদের মুক্তির দাবিতে আমরা আগামী দিনে আরও বড় আন্দোলন করব।’’ সৌমিত্রবাবু বেনাপুরে মৃতের পরিবারের সঙ্গে এ দিন দেখা করে পাশে থাকার আশ্বাস দেন।

পুলিশের দাবি, জমি বিবাদে কিঙ্করকে গুলি করে খুনের চেষ্টা হয়েছিল। সেই মামলা চলছে। তিন অভিযুক্তের মধ্যে একজন ধরা পড়েছে। বাকি দু’জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। কোভিডে ওই বিজেপি নেতার মৃত্যু হয়েছে বলে তাঁর দেহ পরিবারের হাতে দেওয়া হয়নি। ময়নাতদন্তের পরে পুলিশই সৎকার করে।

তৃণমূল খুনের অভিযোগ মানেনি। বিধায়কও দাবি করেছেন, পড়শির সঙ্গে জমি-বিবাদেই গুলিবিদ্ধ হন কিঙ্কর। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অভিযুক্তেরাও দলের কেউ নয়। তিনি বলেন, ‘‘আমরাও প্রকৃত দোষীদের শাস্তি চাইছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement