উলুবেড়িয়ার ২০ নং ওয়ার্ড কন্টেনমেন্ট জ়োন। তবুও সেখানে মানুষের জটলা। ছবি: সুব্রত জানা
ফারাক চোখে পড়ল না। বিকেল ৫টার আগে ছবিটা যা ছিল, তা-ই রয়ে গেল সন্ধ্যায়।
উল্লেখ্য, হাওড়া গ্রামীণ এলাকার ৩৯টি এলাকাকে গণ্ডিবদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেই মহল্লাগুলি এবং তার সংলগ্ন এলাকায় (বাফার জ়োন) বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা থেকে থেকে সম্পূর্ণ লকডাউন জারি হয়েছে। যদিও বাস্তব চিত্র বলছে, লকডাউন-এর বিধিনিষেধ মানা হয়নি নজরে থাকা অনেক এলাকাতেই। প্রশাসনের গা-ছাড়া ভাবও নজরে এসেছে।
কেমন ছিল লকডাউনের ছবি? সরেজমিনে তা দেখতে এ দিন বিকেলে যাওয়া হয়েছিল উলুবেড়িয়া পুরসভার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কুশবেড়িয়া মণ্ডলপাড়ায়।পাড়ার দু’টি বাড়িকে ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে দিনদশেক আগে। দুই বাড়ির চার পরিবারের ২৫ সদস্য ঘরবন্দি। দিন দশেক আগে একটি পরিবারের এক সদস্যের মৃত্যু হয় করোনায়। আক্রান্ত তাঁর পরিবারের সদস্যেরা। দেখা গেল, দু’টি বাড়ির পাঁচিলের গেটে ঝুলছে সরকারি ফেস্টুন। ওই দু’টি বাড়ি ছাড়া মণ্ডলপাড়ার কোথাও মানা হচ্ছে না লকডাউন-এর বিধিনিষেধ।
পাড়ার বুক চিরে চলে গিয়েছে ঢালাই রাস্তা। দেখা যায়, রাস্তার ধারে বসে খোশমেজাজে আড্ডা দিচ্ছেন অনেকে। বেশির ভাগ মহিলার মুখে মাস্ক নেই। পাড়ার নলকূপে তাঁরা ঘেঁষাঘেষি করে দাঁড়িয়ে জল নিচ্ছেন। রাস্তা দিয়ে দিয়ে অবাধে চলাচল করছে মোটকবাইক। কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। বাসিন্দারাও তাঁদের প্রয়োজনে বাইরে বেরিয়েছেন। নেই পুলিশের ব্যারিকেডও।
এলাকার বাসিন্দাদের একাংশের বক্তব্য, বুধবার রাতে পুলিশ এসেছিল। তাঁদের বলে গিয়েছে, ফের এই এলাকায় লকডাউন হবে। বাড়ি থেকে না বেরনোর নির্দেশও দেয় পুলিশ। এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘আমরা পুলিশকে পাল্টা বলি, লকডাউন হলে আমরা তো বাইরে বেরতে পারব না। আমাদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে প্রশাসনকেই। তারপর আর পুলিশ আসেনি।’’
দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ারকে অবশ্য দেখা গিয়েছে। তবে পথে নয়। তাঁরা বসেছিলেন ‘গণ্ডিবদ্ধ’ এলাকা থেকে অন্তত ৫০০ মিটার দূরে একটি বাড়িতে। তাঁদের মধ্যে এক জন বললেন, ‘‘দু’দিন হল এখানে পাঠানো হয়েছে। আমরা শুধু মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখে আসছি, যে বাড়ি দু’টিকে গণ্ডিবদ্ধ করা হয়েছে, সেখান থেকে কেউ বাইরে আসছেন কিনা। বাকি এলাকা নিয়ে আমাদের কিছু বলা হয়নি।’’
মণ্ডলপাড়ার গণ্ডিবদ্ধ একটি পরিবারের সদস্যেরা জানান, ফোন করে বিভিন্ন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী এবং ওষুধপত্র আনিয়ে নিচ্ছেন তাঁরা। পুরসভাও সাহায্য করবে বলে জানিয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, ‘গণ্ডিবদ্ধ’ বাড়ি বা মহল্লার আশেপাশের এলাকাকে ‘বাফার জ়োন’ হিসাবে ধরা হবে। সেখানকার বাসিন্দাদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এ দিন সরকার জানিয়ে দেয়, ‘বাফার জ়োন’-কেও সম্পূর্ণ লকডাউনের আওতায় আনা হবে। সেই মোতাবেক মণ্ডলপাড়ার ওই দু’টি বাড়ির সংলগ্ন এলাকা লকডাউনের আওতায় আসার কথা। গণ্ডিবদ্ধ এলাকা এবং সংলগ্ন বাফার জোন-এর বাসিন্দারা লকডাউন চলাকালীন বাইরে থাকবেন না এবং বাইরের কেউ সেই এলাকায় ঢুকতেও পারবেন না—এমনটাই হওয়ার কথা। রাস্তার দু’টি দিক ঘিরে দিয়ে সেখানে পুলিশ মোতায়েন করা হবে। কিন্তু তা হয়নি।কী বলছে প্রশাসন?
মহকুমাশাসক(উলুবেড়িয়া) অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এলাকায় যাতে লকডাউন হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও যদি কোথাও কোনও গাফিলতির অভিযোগ ওঠে, খোঁজ নিয়ে তার প্রতিকার করা হবে।’’