হতাশ দম্পতি। —নিজস্ব চিত্র
ফোনের সমস্যা নিয়ে ভুল বুঝিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে এক দম্পতির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করে দিল দুষ্টচক্র। প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খুইয়ে চুঁচুড়ার বালির মোড় তিওয়ারিপাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষ এবং স্ত্রী কবিতা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। প্রতারণার ঘটনাটি ঘটে দু’মাস আগে। সঞ্জয়ের দাবি, ব্যাঙ্কের পাশবই আপডেট করাতে গিয়ে শুক্রবার বিষয়টি তাঁদের গোচরে আসে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে, শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত গায়েব টাকা বা দুষ্কৃতীদের হদিস মেলেনি।চন্দননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রতারণার হাত থেকে গ্রাহককে বাঁচাতে পুলিশ এবং ব্যাঙ্কের তরফে প্রচার করা হয়। কিন্তু অনেকেই অসচেতনতার খেসারত দেন।’’
সঞ্জয় ব্যবসায়ী। চুঁচুড়ার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে তাঁর এবং কবিতার একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট রয়েছে। তাঁরা জানান, গত ২২ জুলাই সঞ্জয়ের মোবাইলে একটি ফোন আসে। জানানো হয়, তাঁর মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি ‘থ্রি-জি’ থেকে বাড়িয়ে ‘ফোর-জি’ করতে হবে। না হলে মোবাইল বন্ধ হয়ে যাবে। যোগাযোগের জন্য তাঁদের অন্য একটি নম্বর চাওয়া হয়। সঞ্জয় স্ত্রীর মোবাইল নম্বর দেন। কবিতার মোবাইলে ফোন করে আধার কার্ডের নম্বর চাওয়া হয়। তাঁরা তা দিয়ে দেন। বলা হয়, কবিতার মোবাইলের ওটিপি-সহ একটি ‘মেসেজ’ ঢুকলে সেটি যেন ফরওয়ার্ড করে দেওয়া হয়। ঘোষ দম্পতি তা-ও করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যে সঞ্জয়ের মোবাইল বন্ধ হয়ে যায়। পরে আরও একটি ওটিপি ঢুকলে তাঁরা সেটিও ওই নম্বরে পাঠিয়ে দেন। সঞ্জয় বলেন, ‘‘মেসেজ পাঠানোর পরে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ফের স্ত্রীকে ফোন করা হয়। ব্যাঙ্কের তথ্য চাওয়া হয়। সন্দেহ হওয়ায় দিইনি। পরে ওই নম্বর ডায়াল করে দেখি, ফোন বন্ধ।’’ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আর বিশেষ উৎসাহ দেখাননি।
শুক্রবার ব্যাঙ্কে পাশবই ‘আপ-টু-ডেট’ করানোর পরে সঞ্জয় দেখেন, মাত্র ১০৮ টাকা পড়ে রয়েছে। ব্যাঙ্কের তরফে তাঁকে জানানো হয়, গত ২২ থেকে ২৪ জুলাই— তিন দিনে তাঁদের অ্যাকাউন্ট থেকে ২৯ বারে মোট ১০ লক্ষ ১ হাজার ৫০৩ টাকা তোলা হয়েছে। সঞ্জয় জানান, তাঁর মোবাইল বন্ধ থাকায় টাকা তোলার ‘মেসেজ’ ঢোকেনি। ফলে, প্রতারিত হলেও টের পাননি। শনিবার সঞ্জয় চুঁচুড়া থানা এবং কমিশনারেটের সাইবার ক্রাইম বিভাগে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর প্রশ্ন, দুষ্কৃতীরা তাঁর মোবাইল ফোন কী ভাবে বন্ধ করল? ব্যাঙ্কের তথ্য না দিলেও কী করে টাকাহাতিয়ে নিল?
কমিশনারেটের আধিকারিকরা মনে করছেন, দম্পতির অসেচতনতা এ জন্য দায়ী। তাঁদের ধারণা, আধার কার্ডের সাহায্যে এবং ওটিপি নম্বর বলে দেওয়ায় দুষ্কৃতীরা সঞ্জয়ের নম্বর বন্ধ করে একই নম্বরের সিমকার্ড করিয়ে নেয়। দ্বিতীয় ওটিপি-র সাহায্যে ব্যাঙ্কের লেনদেনের ছাড়পত্রও কার্যত পেয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। সঞ্জয়ের বিকল্প নম্বরের মাধ্যমেই টাকা তুলে ফেলে।
সঞ্জয় বলেন, ‘‘প্রতারণার ব্যাপারে সতর্ক ছিলাম। তাই ব্যাঙ্কের তথ্য দিইনি। মোবাইলটা যাতে বন্ধ না হয়, সে জন্য কিছু তথ্য জানিয়েছিলাম। তাতেই যে দুষ্কৃতীদের খপ্পরে পড়ব, ভাবিনি। আধুনিক প্রযুক্তিতে যেমন সুবিধা হচ্ছে, তেমনই প্রতারকের পাল্লায় পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।’’