Gondolpara

Gondolpara Jute Mill: জুটমিল খুলছে, তবু বিষণ্ণ গোন্দলপাড়া

কর্মহীন সোমবারের বিকেলে মিলের দীর্ঘ পাঁচিলের পাশ জুড়ে দেখা গিয়েছে শ্রমিকের ভিড়। কেউ তাস খেলছেন, কেউ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিচ্ছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চন্দননগর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০২২ ০৮:৫৭
Share:

গোন্দলপাড়া জুটমিল। নিজস্ব চিত্র

বছরের অর্ধেক পার। পাটের জোগান নিয়ে টালবাহানা, বিরোধীদের আন্দোলন, শাসকের প্রতিশ্রুতির পরে অবশেষে চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল খুলতে চলেছে। সোমবার কলকাতায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের পরে শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না জানিয়েছেন, আগামী পয়লা জুলাই, রথযাত্রার দিন মিলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে। উল্টোরথের মধ্যেই চালু হবে উৎপাদন।

Advertisement

বিকেলেই এ খবর পৌঁছয় গোন্দলপাড়ায়। তবে, মিল খোলার খবরেও উচ্ছ্বাস দেখাতে নারাজ বহু শ্রমিক। গত কয়েক বছরে মিল খোলা আর বন্ধের অভিজ্ঞতা তাঁদের হাসি কেড়েছে। যে মিল এক সময় ভরসা জোগাত, এখন তার উপরে অবিশ্বাস শ্রমিক মহল্লার!

কর্মহীন সোমবারের বিকেলে মিলের দীর্ঘ পাঁচিলের পাশ জুড়ে দেখা গিয়েছে শ্রমিকের ভিড়। কেউ তাস খেলছেন, কেউ চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিচ্ছেন। কারও চোখে শূন্যদৃষ্টি। রামাশঙ্কর চৌধুরী নামে এক শ্রমিকের খেদ, ‘‘অনেক দিন ধরেই মিল খোলা-বন্ধের খেলা দেখছি। আর ভাল লাগছে না। সংসার, সন্তানের পড়াশোনার জন্য মজুরের কাজ করছি।’’ মিলের ‘ব্যাচিং’ বিভাগের এই শ্রমিকের সংযোজন, ‘‘মিল চললে শ্রমিকের পেট ভরবে। কিন্তু আমার সামনের বছর অবসর। কপালে কী আছে, জানি না।’’

Advertisement

মিলের ‘পাটঘর’ বিভাগের শ্রমিক বিক্রম মাহাতো জানান, মিল বন্ধের সময় তাঁর শরীর খারাপ হয়েছিল। ইএসআই কার্ডে মিল-কর্তৃপক্ষ টাকা জমা না দেওয়ায় ওই সুবিধা মেলেনি। গ্যাঁটের কড়ি খসিয়ে চিকিৎসা করতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মিল চললে ভালই। কিন্তু, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা না থাকলে ফের বন্ধের পথে চলে যাবে। ফের আমাদের দুর্দশায় কাটবে।’’

পরিস্থিতি নিয়ে সরব বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। এআইইউটিইউসি-র সর্বভারতীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দিলীপ ভট্টাচার্যের ক্ষোভ, জুটমিলে বারো মাস কাজের নিশ্চয়তা থাকছে না শ্রমিকের। পুরো বেতনেই যেখানে তাঁদের সংসার ভাল ভাবে চলে না, সেখানে মিল বন্ধ থাকলে কী অবস্থা হয়, সহজেই অনুমেয়। মিল যাতে হুটহাট বন্ধ না হয়, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকারের দেখা উচিত। সিটু-র হুগলি জেলা সাধারণ সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায়ের বক্তব্য, ‘‘বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের একত্রিত লড়াইয়ের ফলে মালিকপক্ষ এবং সরকারের উপরে চাপ তৈরি হয়েছে। তবে, পে-রোলে নাম থাকা প্রত্যেক শ্রমিককে কাজে নিতে হবে। যদি দেখি কারখানা খুলছে, অথচ শ্রমিকের লাভ হচ্ছে না, ফের রাস্তায় নেমে আন্দোলন হবে।’’

শ্রমমন্ত্রীর দাবি, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের ভুল পাটনীতির জন্যই মিল বন্ধ হয়েছিল। এখন সে সমস্যা মিটেছে।’’ সিআইটিইউ নেতৃত্বের অভিযোগ, পাটের কৃত্রিম অভাব দেখিয়ে জুটমিল বন্ধ করা হয়েছিল।

২০১৮ সালে গোন্দলপাড়া জুটমিল বন্ধ হয়। অভিযোগ, পরিস্থিতির জেরে সেই সময় ৬ শ্রমিক আত্মঘাতী হন। অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা যান। প্রায় ২৯ মাস পরে মিল খোলে। গত পয়লা জানুয়ারি কাঁচাপাটের সমস্যা এবং আর্থিক কারণ দেখিয়ে মিলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’ ঘোষণা করা হয়। ফলে, হাজার পাঁচেক শ্রমিক সমস্যায় পড়েন। স্থানীয় অর্থনীতিতেও মিল বন্ধের প্রভাব পড়ে।

‘স্প্রিং’ বিভাগের শ্রমিক ধর্মেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘মিল চালু হচ্ছে, শুনে ভালই লাগছে। কিন্তু, আবার বন্ধ হয়ে যাবে না তো? আমার একমাত্র ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সুযোগ পেলেও আর্থিক কারণে পড়াতে পারলাম না।’’ ‘চট’ বিভাগের শ্রমিক ভীম পাসোয়ানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘মিল খুলছে বলে শুনলাম। তবে, না আঁচালে বিশ্বাস নেই।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement