Gondolpara Jute Mill

ফাউলাই-এর টাকাতেই স্বস্তি খুঁজছে দিশাহারা গোন্দলপাড়া

শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সরকারি এই ভাতার অঙ্ক মাসে দেড় হাজার টাকা। তাঁরা আপাতত তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের দু’মাসের ভাতা মিলেছে।

Advertisement

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় 

চন্দননগর শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৪৯
Share:

ভাতা বাচিয়ে রেখেছে গন্দলপাড়া জুটমিল কর্মীদের। — ফাইল চিত্র।

বছর ঘুরে গেল। খুলল না চন্দননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিলের দরজা। কয়েক হাজার শ্রমিকের সংসারে সঙ্গী নিত্য অনটন। ফাউলাইয়ের (বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের প্রাপ্য সরকারি ভাতা) সামান্য টাকায় স্বস্তি খুঁজছে বেরোজগারে, দিশেহারা শ্রমিক মহল্লা। জানা গিয়েছে, ওই ভাতার বকেয়ার এক কিস্তির টাকা মিলেছে। সোমবার রাত থেকে শ্রমিকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তা ঢুকতে শুরু করে। বহু দিন ধরেই শ্রমিকেরা ওই টাকার দাবি জানাচ্ছিলেন।

Advertisement

শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, সরকারি এই ভাতার অঙ্ক মাসে দেড় হাজার টাকা। তাঁরা আপাতত তিন হাজার টাকা করে পেয়েছেন। অর্থাৎ, তাঁদের দু’মাসের ভাতা মিলেছে। মোট বকেয়া টাকার পরিমাণ অনেক বেশি। আরও অন্তত দশ মাসের ভাতা বকেয়া। ওই টাকাও দ্রুত মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা।

এক শ্রমিকের কথায়, ‘‘মিল বন্ধ থাকলে কী ভাবে সংসার চলে আমাদের, নিশ্চয়ই কারও অজানা নয়। ভাতার এইটুকু টাকাই এখন আমাদের কাছে অনেক। আমাদের অবস্থাটা বুঝুন। বাকি টাকাটাও তাড়াতাড়ি দিয়ে দিলে আর একটু সুরাহা হয়।’’

Advertisement

মিলের কর্মী, উৎপাদন চালুর দাবিতে আন্দোলনরত রাজেশ জয়সোয়ারা বলেন, ‘‘আপাতত মিলের ৩০৪২ জন ফাউলাইয়ের টাকা পেয়েছেন। প্রকৃত প্রাপকের সংখ্যা ৩৬০০।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শ্রম দফতর থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, যাঁরা টাকা পাননি, তাঁরা কোনও কারণে মিল বন্ধের সময় কর্মরত ছিলেন না। যদিও আমরা বলেছি, প্রত্যেক শ্রমিককে বকেয়া ভাতা দিতে হবে। আমাদের দাবি বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’’ শ্রম দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন এবং ঠিক কী কারণে বাকি শ্রমিকেরা ফাউলাইয়ের টাকা পাননি, দেখা হচ্ছে।’’

চন্দননগরের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শ্রমিক কল্যাণ সমিতির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, ‘‘ক্লাবে, পুজোয় রাজ্য সরকারের টাকা থাকে। কিন্তু বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের ফাউলাইয়ের নায্য টাকা শ্রমিকদের বেলায় থাকে না!’’

২০২১ সালের পয়লা জানুয়ারি থেকে মিলটি বন্ধ। উৎপাদন চালুর দাবিতে সরকারের বিভিন্ন দফতরে দরবার করে আসছেন শ্রমিকেরা। অভিযোগ, অভাবের সঙ্গে যুঝতে না পেরে কোনও শ্রমিক আত্মঘাতী হয়েছেন, কেউ চিকিৎসার অভাবে মারা গিয়েছেন। মাস কয়েক আগে মিল খোলার নোটিস দেন কর্তৃপক্ষ। রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কিছু শ্রমিককে নেওয়া হয়। সবাই যখন উৎপাদন চালুর আশায় বুক বাঁধছেন, তখনই ফের মিলে তালা ঝোলে।

এর পরে ক্ষিপ্ত শ্রমিকেরা মিল খোলার দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দেন। জেলা প্রশাসনের তরফে তাঁদের আশ্বস্ত করা হয়, মিল খুলতে তাঁরা পদক্ষেপ করবেন। কিন্তু, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। উৎপাদন বন্ধ থাকাই শুধু নয়, প্রাপ্য পরিষেবা নিয়েও অভিযোগ তোলেন শ্রমিকরা। কিছুদিন আগে শ্রমিক মহল্লায় বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। শ্রমিকেরা প্রতিবাদ জানানোয় তখন অবশ্য ফের বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement