চুঁচুড়ার ধরমপুর মাঠে অনুশীলনে ব্যস্ত দেবযানী।
নাম মিষ্টি। তবে মাঠে বিপক্ষকে নিজের ‘ঝাঁঝ’ টের পাইয়ে ছাড়ছে চুঁচুড়ার ধরমপুরের মহামায়া কলোনির ত্রয়োদশী। ক্রিকেটে হাতেখড়ি বছর চারেক আগে। তার মধ্যেই ঘরোয়া থেকে রাজ্য স্তরে বিপক্ষ ব্যাটারকে ঘুর্ণিপাক খাইয়েছে বাঁহাতি ওই চায়নাম্যান বোলার। অনূর্ধ্ব ১৫ জাতীয় প্রতিযোগিতাতেও অন্যথা হল না। সম্প্রতি হরিয়ানায় বিসিসিআই আয়োজিত নকআউট ক্রিকেট প্রতিযোগিতায় সর্বাধিক উইকেট শিকারি সে। ঝুলিতে হ্যাটট্রিকও আছে।
এ বারেই প্রথম জাতীয় ক্রিকেটে ডাক এসেছিল দেবযানী দাস ওরফে মিষ্টির। ৩৫ ওভারের নকআউট প্রতিযোগিতায় ৩০টি রাজ্য ছিল। বাংলার প্রথম ম্যাচে গোয়ার বিপক্ষে অভিষেক হলেও লো-স্কোরিং সেই ম্যাচে বল করার সুযোগ হয়নি মিষ্টির। দ্বিতীয় ম্যাচে তার বোলিংয়ে তছনছ হয় সিকিম। ৭ ওভার বল করে ৩টি মেডেন-সহ ৬ রান খরচ করে ৭টি উইকেট তুলে নেয় সে। বিহারের বিরুদ্ধে ৬টি। সেমিফাইনালে হরিয়ানার বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক-সহ ৫টি উইকেট। ওই ম্যাচে অবশ্য বাংলা হেরে যায়। সব মিলিয়ে ৬ ম্যাচে মিষ্টির ব্যাগে ২০টি উইকেট।
চুঁচুড়া, চন্দননগরের মাঠের পাশাপাশি কলকাতার ওয়াইএমসিএ-তেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছে মিষ্টি। ওয়াইএমসিএ-র কোচ শিবশঙ্কর পাল মিষ্টির বোলিংয়ে খুশি। তাঁর বক্তব্য, এখনও বহু দূর যেতে হবে ওকে। এখনই ছাত্রীকে নিয়ে খুব বেশি হইচই হোক, তিনি চাইছেন না।
চুঁচুড়া বালিকা বাণীমন্দিরের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী মিষ্টি বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকে। প্লাস্টারহীন ছোট্ট ঘর। দিদি দীপান্বিতার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দিদির মতো ছোটবেলায় মিষ্টি অ্যাথলেটিক্স বেছে নিয়েছিল। বছর চারেক আগে চুঁচুড়া ময়দানে ছেলেদের ক্রিকেট দেখে বাবা পার্থ দাসের কাছে ব্যাট-বল খেলার আব্দার করে সে। এক সময়ে টেনিস বলের ক্রিকেটে মাঠ কাঁপাতেন পার্থ। ডিউসে খেলার স্বপ্ন থাকলেও অর্থাভাবে সম্ভব হয়নি। ছোট মেয়েকে তিনি উডবার্ন ক্লাবে ক্রিকেটে ভর্তি করিয়ে দেন। মেয়ের স্বপ্ন, দেশের সিনিয়র দলে খেলবে। মা-বাবাও একই স্বপ্ন দেখছেন।
ছাপোষা সংসারে মেয়ের স্বপ্ন সফল করতে ঋণ নিতে হয় দাস দম্পতিকে। পার্থ আসবাবপত্র সারাই করেন। মেয়ের খেলাধুলোর জন্য এখানে-সেখানে যেতে হয়। কাজে প্রভাব পড়ে। সংসারের হাল ধরতে মিষ্টির মা প্রতিমা বাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করছেন।
মেয়েদের ক্রিকেটে চুঁচুড়ার তিতাস সাধু সাড়া জাগিয়েছেন। ‘চুঁচুড়া এক্সপ্রেস’ তিতাসের পাশে দেশের টুপিতে দেখা যাবে বাঁ হাতি ‘ঘূর্ণি’কে! এই স্বপ্নই দেখতে শুরু করেছে চুঁচুড়া তথা হুগলির ক্রিকেট মহল।