জয়ের পর উলুবেড়িয়া পুরসভার ২৮ জন তৃণমূল প্রার্থী। ছবি: সুব্রত জানা
৩২-এ ২৮।
গতবারের চেয়েও চারটি বেশি ওয়ার্ডে জিতে উলুবেড়িয়া পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রাখল তৃণমূল। জিতেই উলুবেড়িয়া দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী পুলক রায়ের আশ্বাস, ‘‘নতুন পুরবোর্ড আমাদের দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করবে। উলুবেড়িয়াকে ‘মডেল শহর’ হিসাবে গড়ে তোলা হবে।’’
বিরোধীরা পরাজয়ের কারণ হিসাবে শাসক দলের বিরুদ্ধে রিগিং এবং ছাপ্পাভোটের অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ নস্যাৎ করেছে তৃণমূল। পঞ্চায়েতমন্ত্রী বলেন, ‘‘রিগিং এবং ছাপ্পাভোটের অভিযোগ সত্যি হলে আমরা ৩২টি ওয়ার্ডেই জিততাম। এইসব গালগল্প ছড়িয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার চেষ্টা করছেন বিরোধীরা।’’
বিরোধীদের জেতা চারটি ওয়ার্ডের মধ্যে একটি করে গিয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস এবং সিপিএমের দখলে। আর একটিতে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। তিনি নিজেকে বিক্ষুব্ধ সিপিএম বলে দাবি করেছেন।
গত বারে সিপিএমের দখলে ছিল পাঁচটি ওয়ার্ড। তার মধ্যে শুধুমাত্র ১০ নম্বরটি তারা এ বারেও দখলে রাখতে পেরেছে। গত পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা ছিলেন সাবিরুদ্দিন মোল্লা। তিনি জিতেছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে। ১৯৮২ সাল থেকে গত পুরভোট পর্যন্ত এই ওয়ার্ডটি সিপিএমের দখলে ছিল। এ বারে সেটিও চলে এসেছে তৃণমূলের দখলে।
গত বার বিজেপির দখলে চারটি ওয়ার্ড থাকলেও এ বারে তারা জিতেছে শুধুমাত্র ২৯ নম্বরে। এই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর অঞ্জনা অধিকারী এ বারেও জিতেছেন। আগের দফায় কংগ্রেস পাঁচটি ওয়ার্ডে জিতলেও জেতার পরে সবাই তৃণমূলে যোগ দেন। এ বারে কংগ্রেস জয়ী শুধু ২ নম্বর ওয়ার্ডে।
গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখেও বিরোধীদের ফল বেশ খারাপ। উলুবেড়িয়া পুরসভার পুরোটা পড়ে উলুবেড়িয়া পূর্ব কেন্দ্রে। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এগিয়েছিল ১৩টি ওয়ার্ডে। একটি বাদ দিয়ে আর কোনও ওয়ার্ডে বিধানসভা ফলের সাফল্য তারা ধরে রাখতে পারেনি। আবার এই বিধানসভা কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চার প্রার্থী ছিলেন আইএসএফ-এর। আইএসএফ একটি মাত্র ওয়ার্ডে (২৪ নম্বর) এগিয়েছিল। এই ওয়ার্ডের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী সবুজ-ঝড়ের মুখে খড়কুটোর মতো উড়ে গিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে অনেক ওয়ার্ডে বিরোধীদের সঙ্গে তৃণমূলের ভোটের ফারাকও অনেক বেড়ে গিয়েছে।
১৭ নম্বর ওয়ার্ডে জয়ী নির্দল প্রার্থী শেখ আলাউদ্দিন। তিনি তৃণমূল প্রার্থীকে হারিয়েছেন ১৩৪ ভোটে। আলাউদ্দিন বলেন, ‘‘এখানে সিপিএমের যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁকে সাধারণ মানুষ চাননি। তাই সাধারণ মানুষের মনোভাবকে সম্মান দিতে আমি নির্দল হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। সব রাজনৈতিক দলের শুভ মনোভাবাপন্ন মানুষজন আমাকে ভোট দিয়ে জিতিয়েছেন। আমি দিদির (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) উন্নয়নমূলক কাজকে সমর্থন করি। ভবিষ্যতে তাঁর উন্নয়নমূলক কাজের শরিক হতে চাই।’’ পুলকবাবু বলেন, ‘‘আমাদের দলনেত্রীর উন্নয়নমূলক কাজে যে কেউ অংশীদার হতে পারেন। তবে কেউ তৃণমূলে যোগ দিতে চাইলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে দলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে।’’