প্রতীকী ছবি।
সিইও-র আবাসনে হামলার ঘটনায় ১০ জন শ্রমিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন রিষড়ার ওয়েলিংটন জুটমিল কর্তৃপক্ষ। শনিবার রাতে শ্রীরামপুর থানায় তাঁদের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পাশাপাশি, তাঁদের মিলে ঢোকা বন্ধেরও (গেট বাহার) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই রাতেই এই মর্মে মিলের গেটে বিজ্ঞপ্তি সেঁটে দেওয়া হয়।
সিইও শান্তনু খেলোয়াড় বলেন, ‘‘হামলার সময় ওঁরা উপস্থিত এবং সক্রিয় ছিলেন। মিলে কাজ চলছে। কিন্তু যা ঘটল, দুর্ভাগ্যজনক। এ ভাবে মিল চলে!’’
শ্রমিক নেতাদের একাংশের দাবি, ওই শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক জন হামলার সময় মিলে কর্মরত ছিলেন। সিটু নেতা সুমঙ্গল সিংহ বলেন, ‘‘হামলা, ভাঙচুর আমরা সমর্থন করি না। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কিন্তু বিনা অপরাধে কেউ যেন সাজা না পান। ওই শ্রমিকদের মধ্যে কয়েক জন ঘটনার সময় মিলে
কাজ করছিলেন।’’
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। অভিযুক্তরা পলাতক। তাঁদের খোঁজ চলছে। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের এক আধিকারিক জানান, জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে। এফআইআরে যাদের নাম রয়েছে, তারা বাদেও আর যারা হামলায় যুক্ত, তাদের চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা চলছে।
মিলের চৌহদ্দিতেই শান্তনুবাবু স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে থাকেন। শ্রীরামপুর থানায় দায়ের করা অভিযোগে মিল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৬টা ১০ মিনিট নাগাদ ওই ১০ শ্রমিক-সহ ৭০-৮০ জন মিলের অফিসে ঢোকে মানবসম্পদ উন্নয়ন বিভাগের এক আধিকারিকের খোঁজে। তিনি সেখানে ছিলেন না। তখন তারা মূল অফিসে গিয়ে সিইও শান্তনুবাবুকে খোঁজে। শান্তনুবাবুকে না পেয়ে তাঁর আবাসনে গিয়ে দু’টি গাড়ি, পাখা, টিউবলাইট, কাঠের জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, কিছু যন্ত্রাংশ এবং অন্য জিনিসও খোওয়া গিয়েছে। শ্রমিক নেতা প্রাণেশ বিশ্বাসের ইন্ধনে এই ঘটনা ঘটেছে বলেও মিল কর্তৃপক্ষের দাবি। পুলিশকেও তা জানিয়েছেন তাঁরা।
প্রাণেশবাবু অভিযোগ মানেননি। এআইটিইউসি-র এই বর্ষীয়ান নেতার পাল্টা অভিযোগ, ‘‘কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সঙ্গে বঞ্চনা করছেন। সেই নিয়ে আমাদের আন্দোলন বানচাল করতেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। আমরা ভাঙচুর, মারামারির বিরোধী। যারা দোষী, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে
ব্যবস্থা দিক।’’
হামলার পিছনে মিলের তিনটি স্বীকৃত শ্রমিক সংগঠনের হাত রয়েছে বলে তৃণমূল নেতা সাকির আলির অভিযোগ। সিটুর পাল্টা অভিযোগ, সম্প্রতি তৃণমূলের সভা থেকে গোলমালের ইন্ধন দেওয়া হয়। সাকির অভিযোগ মানেননি।
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখানে উৎপাদন বন্ধ ছিল। রাজ্য সরকারের মধ্যস্থতায় গত ১৮ অক্টোবর উৎপাদন চালু হয়। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে নামমাত্র। প্রায় দু’হাজার শ্রমিকের মধ্যে আড়াইশো জনেরও কাজ জোটেনি। মালিকপক্ষের দাবি, অন্য মিলে ৩০-৩৫ জন যে উৎপাদন করেন, এখানে ৮০-৮৫ জন তা করেন। ওই সংখ্যা চল্লিশের কম করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু শ্রমিক নেতারা বিষয়টি চূড়ান্ত করছেন না। শ্রমিক নেতাদের একাংশের দাবি, কর্তৃপক্ষই বৈঠক ডাকছেন না।
পরিস্থিতির জেরে শ্রমিক অসন্তোষ বাড়ছেই। বহু শ্রমিকের বক্তব্য, কাজ না পেয়ে তাঁরা আর্থিক সমস্যায় ভুগছেন। এ জন্য তাঁরা মালিকপক্ষকে দুষছেন। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, শ্রমিকদের অসন্তোষ এবং বিক্ষোভের সম্ভাবনা আঁচ করে বারবার বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। বুধবার প্রাণেশবাবু এ নিয়ে শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্নাকে চিঠি দেন। মিল কর্তৃপক্ষকে প্রতিলিপি দেওয়া হয়।