— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
রাজ্য বাজেটে তাঁত শিল্পের জন্য প্রকল্প ঘোষণা হয়েছে। এর পরেও মন খারাপ উদয়নারায়ণপুরের তাঁত ক্লাস্টারের সঙ্গে যুক্ত শ’দুয়েক তন্তুবায় ও কর্মীর। এই ক্লাস্টারটি এক সময়ে রমরমিয়ে চললেও গত দু’বছর ধরে কার্যত বন্ধ। ফলে, এর সঙ্গে যুক্ত তাঁতিরা তেমন কাজ পাচ্ছেন না। তাঁদের বহু টাকা মজুরিও বকেয়া রয়েছে বলে অভিযোগ। ২১ ফেব্রুয়ারি উদয়নারায়ণপুরে তন্তুবায়দের নিয়ে বৈঠক করতে আসছেন রাজ্য
রাজ্য খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের কর্তারা। সেখানে তাঁদের সমস্যার
কথা তুলে ধরবেন বলে জানান এখানকার গজা তন্তুবায় সমিতির সদস্যদের একাংশ।
পশ্চিমবঙ্গ খাদি ও গ্রামীণ শিল্প পর্ষদের উদ্যোগে এবং গজা তন্তুবায় সমবায় সমিতির তত্ত্বাবধানে ক্লাস্টারটি তৈরি হয়। ২০১৯ সালে উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা ও গুদাম করে দেয় রাজ্য বস্ত্র ও তাঁত শিল্প দফতর। তারা তাঁত শিল্পের যন্ত্রপাতিও দেয়। সব মিলিয়ে সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করে।
ক্লাস্টার সূত্রের খবর, তন্তুজ এবং খাদি বোর্ডের বরাতে এখানে থান কাপড় তৈরি হচ্ছিল। এর মধ্যে খাদি বোর্ডের বরাতই বেশি ছিল। সমিতির অধীনে যে সব তন্তুবায় আছেন, তাঁদের এখানে কাজ দেওয়া হয়। তুলো দিত তন্তুজ এবং খাদি বোর্ড। সেই তুলো থেকে সুতো তৈরি করে এবং তা থেকে থান কাপড় তৈরি করে সরবরাহ করা হত খাদি বোর্ডকে। মজুরি বাবদ টাকা খাদি বোর্ড দিয়ে দিত সমিতিকে।
২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে বরাত দেওয়া বন্ধ করে দেয় খাদি বোর্ড। একই সঙ্গে তৈরি হয়ে যাওয়া থান কাপড়ও তারা নেয়নি। তন্তুজের বরাত অবশ্য বজায় আছে। কিন্তু তা নামমাত্র বলে সমিতি সূত্রের খবর। ফলে অধিকাংশ তাঁতি কাজ পাচ্ছেন না।
সমিতির এক কর্তার দাবি, জমে থাকা থান কাপড় খাদি বোর্ড নিলে তারা বাজারে বিক্রি করে ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পেত। সেই টাকা পেলে সমিতির মজুরি বাবদ পাওনাও তারা মিটিয়ে দিতে পারত। তন্তুজের বরাত খুব কম। তারা যে মজুরি দেয়, তাতে অল্প কিছু তাঁতিকে কাজ দেওয়া সম্ভব হলেও ক্লাস্টার চালানো সম্ভব নয়।
ক্লাস্টারে রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি। তুলো থেকে সুতো তৈরি এবং তা থেকে থান কাপড় বানানোর সব যন্ত্রপাতি এখানে মজুত। থান কাপড় তৈরি হওয়ার পরে তা রং করার ব্যবস্থাও আছে। ক্লাস্টারে বসে যেমন তাঁতিরা কাজ করতে পারতেন, তেমনই এখান থেকে বরাত নিয়ে গিয়ে বাড়িতেও অনেকে কাজ করতেন। তাঁদেরও নিখরচায় সরকারি উদ্যোগে তাঁতযন্ত্র দেওয়া হয়েছে। কিন্তু খাদি বোর্ড কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ওই সব তাঁত কারখানাগুলিরও ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যন্ত্রপাতিতেও ধুলো জমছে।
সমবায়ের এক কর্তা জানান, তাঁরা পুজোর আগে খাদি বোর্ডকে চিঠি দিয়ে বকেয়া মজুরি মিটিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে খাদি বোর্ডের কর্তারা পরিদর্শনে এসে বকেয়া মেটানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু তা রাখা হয়নি বলে অভিযোগ।
খাদি বোর্ডের চেয়ারম্যান কল্লোল খান বলেন, ‘‘জমে থাকা থান কাপড় বিক্রি করে তন্তুবায় এবং সমিতির কর্মীদের বকেয়া মেটানোর জন্য বোর্ডের আধিকারিকদের বলেছিলাম। কেন তা হয়নি খোঁজ নেব।’’ খাদি বোর্ডের এক পদস্থ আধিকারিকের অবশ্য দাবি, জমে থাকা থান কাপড় বিক্রি করা যায়নি।