খসড়া প্রস্তাব তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধান-বিরোধী বলে বর্ণনা করেছেন বিরোধীরা। ফাইল ছবি
রাজ্য সরকারের নির্দেশ মেনে বালিকে বাদ দিয়ে অবশেষে হাওড়া পুরসভা এলাকার ৫০টি ওয়ার্ডের পুনর্বিন্যাসের খসড়া প্রস্তাব প্রকাশ করল হাওড়া জেলা প্রশাসন। বুধবার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া পুরসভার পূর্বতন যে ৫০টি ওয়ার্ড ছিল, সেগুলির পুনর্বিন্যাস করে ৬৬টি ওয়ার্ড করা হয়েছে। ওই খসড়া প্রস্তাব জেলা প্রশাসনের নির্বাচন দফতরে ও হাওড়া পুরসভায় এ দিন ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই প্রস্তাব নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলের মতামত, সংযোজনের ইচ্ছে বা বিরোধিতা থাকলে, তা লিখিত ভাবে জানাতে হবে। তা নিয়ে আলোচনার পরেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে। যদিও বিরোধীরা ওই খসড়া প্রস্তাব তৈরির প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ বেআইনি ও সংবিধান-বিরোধী বলে বর্ণনা করেছেন। বিজেপির পক্ষ থেকে মামলা করার হুমকিও দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া সদরের চারটি বিধানসভা কেন্দ্রে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করে অতিরিক্ত ১৬টি ওয়ার্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে দক্ষিণ হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রে ওয়ার্ড ভেঙে বা পুনর্বিন্যাস করে অতিরিক্ত ছ’টি, শিবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পাঁচটি, উত্তর হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রে তিনটি ও মধ্য হাওড়া বিধানসভা কেন্দ্রে দু’টি অতিরিক্ত ওয়ার্ড হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যে সমস্ত ওয়ার্ডে ২৩ হাজার বা তার বেশি ভোটার রয়েছেন, সেই সমস্ত ওয়ার্ড ভেঙেই নতুন ওয়ার্ড তৈরি করা হয়েছে। এর জন্য বদলে যাচ্ছে ওয়ার্ডগুলির নম্বরও।
এর আগে গত ১৮ জুলাই পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সচিব হাওড়ার জেলাশাসক মুক্তা আর্যকে চিঠি দিয়ে বালির ১৬টি ওয়ার্ড বাদ দিয়েই হাওড়া পুর এলাকার ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করে ৬৬টি করার নির্দেশ দেন। নতুন যে ১৬টি ওয়ার্ড হবে, তা ভোটারদের সংখ্যার ভিত্তিতে ভাগ করে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করতে বলেন তিনি। আগে ঠিক ছিল, খসড়া পেশ হওয়ার পরে, পুজোর আগেই সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে তা অনুমোদনের ব্যবস্থা করা হবে। পুজো দোরগোড়ায় এসে যাওয়ায় তা আর সম্ভব নয় বলে প্রশাসনিক কর্তাদের মত।
এ দিন হাওড়া পুরসভায় ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের বিজ্ঞপ্তি বা তালিকা টাঙানোর পরেই পুরসভার ভোট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়। ভিড় জমে যায় অ্যানেক্স বিল্ডিং-এর একতলায়, নোটিস বোর্ডের সামনে। ওই খসড়া তালিকা প্রকাশের পরেই হাওড়া পুরসভা ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা মনে করছেন, এ বছরের শেষে বা সামনের বছরের শুরুতেই হাওড়া পুরভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে।
বিরোধীরা অবশ্য এই ভাবে খসড়া তালিকা প্রকাশের পদ্ধতিকেই সম্পূর্ণ বেআইনি বলে দাবি করেছেন। বিজেপির হাওড়া জেলা সদর সভাপতি মণিমোহন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা না বলে, বৈঠকে না ডেকে একতরফা ভাবে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের কাজ করেছে প্রশাসন। এটা পুরোপুরি বেআইনি। প্রয়োজনে আইনি পথে হাঁটবে দল।’’
এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক পদ্ধতি না মেনে, অন্য রাজনৈতিক দলকে না ডেকে ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। তবে এ নিয়ে আমাদের প্রশ্ন থাকলেও আমরা হাওড়া পুরসভার নির্বাচন হোক, সেটা চাই।’’
বিরোধীদের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন তৃণমূলের হাওড়া জেলা সদর সভাপতি কল্যাণ ঘোষ। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘হাওড়া পুরসভায় বোর্ড না থাকায় বাসিন্দারা তীব্র সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার ও কমিশন ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রশাসন তালিকা প্রকাশ করে তা নিয়ে আবেদন বা আপত্তি জানানোর সময় দিয়েছে। এ নিয়ে পরে সর্বদলীয় বৈঠকও ডাকবে প্রশাসন। সেখানে বিরোধীদের ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাস নিয়ে আপত্তি থাকলে তাঁরা তা জানাবেন।’’