চক্রপুরের ডাকাতকালীর পুজোয় আজও যাবতীয় প্রথা মেনে চলা হয়। —নিজস্ব চিত্র।
এক সময় ডাকাতির পর কালীপুজোয় বসতেন কালীচরণ মাঝি এবং তাঁর চেলাচামুন্ডারা। দিন বদলেছে। কালীচরণের বংশধরেরা আজ আর ডাকাতি করেন না। তবে প্রথা বজায় রাখতে রাতের অন্ধকারে ফল চুরি করেন তাঁরা। সে ফল কালীকে নিবেদন করেই পুজো শুরু করেন। হুগলি জেলার খানাকুলে সাড়ে তিনশো বছরের বেশি পুরনো ডাকাতকালীর পুজোয় এমন অভিনব বহু রীতি পালন করা হয়।
খানাকুলের চক্রপুরে ডাকাতকালীর পুজোটি চলতি বছরে ৩৫৬তম। কথিত, ৩৫৬ বছর আগে এ এলাকায় কালী ডাকাত নামে পরিচিত ছিলেন কালীচরণ মাঝি। তিনিই এ পুজোর সূচনা করেছিলেন। কালীচরণের বংশধরেরা জানিয়েছেন, এখনও পুজোর দিন শতাধিক ছাগবলি হয়। পাশাপাশি মেনে চলা হয় ঘটপুজোর রীতিও। কালীপুজোর দিন রাতে কালীচরণের বংশের এক জন সদস্য প্রথম মায়ের ঘট উত্তোলন করেন। তার পর আরও একটি ঘট উত্তোলন করেন পুরোহিত। ঘট দু’টি কালীমূর্তির পায়ের নীচে বসিয়ে তার পর শুরু হয় পুজোপাঠ। কালী ডাকাতের উত্তরপুরুষ অনিমেষ পণ্ডিত বলেন, ‘‘যাবতীয় প্রথা মেনে এ বারও কালীপুজো হবে। ডাকাতি করে কালীপুজোর যে রীতি, তা-ও মানা হবে। এখন ডাকাতি করা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে রাতের অন্ধকারে ফল চুরি করে মায়ের পায়ে নিবেদন করা হয়।’’
ডাকাতকালীর পুজোয় আরও কয়েকটি অভিনব রীতি রয়েছে। পুরোহিত জীবনকৃষ্ণ চক্রবর্তী বলেন, ‘চার প্রহরে চার বার পুজো-আরতি হয়। সেই সঙ্গে কালীপুজোর সমস্ত রীতি মেনে চলি আমরা।’’
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, ২০০ বছর আগে এই কালীপুজোকে কেন্দ্র করে এলাকায় প্রথম মেলা বসেছিল। তার পর থেকে ফি বছরই মেলা বসত। করোনা পরিস্থিতির জন্য গত বছর থেকে সে সবই কাটছাঁট করা হয়েছে। সংক্রমণের আশঙ্কায় জনসমাগম রুখতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।