দাপট: শ্রীরামপুরের জিটি রোডে টোটোর সারি। ফাইল ছবি
করোনা-পর্বে গত দু’বছর দুর্গাপুজোর আয়োজন সে ভাবে হয়নি। এ বার করোনার জুজু উধাও। পুজো আয়োজনে বিধিনিষেধ নেই। ফলে, মণ্ডপে মণ্ডপে পরিচিত ভিড় আছড়ে পড়বে বলে অনেকেই মনে করছেন। হুগলি জেলার বিভিন্ন শহরে টোটোর সংখ্যা এখনও বেলাগাম। তার ফলে, এমনিতেই পথঘাটে যানজটে নাকাল হতে হয়। পুজোয় তার সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় মিশলে পরিস্থিতি আরও বেগতিক হতে পারে। তাতে, ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে নাকাল হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
হুগলির উত্তরপাড়া, কোন্নগর, শ্রীরামপুর, চুঁচুড়ার মতো শহরে কত টোটো চলে, প্রশাসনের কেউ জানেন না। টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বা পুরসভা সেই ভাবে কড়া কোনও পদক্ষেপও করেনি। চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট অবশ্য স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে দর্শনার্থীদের আশ্বস্ত করছে। পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি বলেন, ‘‘পুজোর দিনগুলিতে যাতে মানুষের ঠাকুর দেখতে কোনও অসুবিধা না হয়, পুলিশ সেই বিষয়ে সতর্ক থাকবে। যান নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
টোটোর সংখ্যাধিক্যই পুজোয় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে জেলা সদর চুঁচুড়া থেকে শ্রীরামপুর, কোন্নগর— সর্বত্রই। হুগলি-চুঁচুড়ার পুরপ্রধান তথা সেখানকার কেন্দ্রীয় পুজো কমিটির কর্মকর্তা অমিত রায় বলেন, ‘‘সারা বছর মানুষ মুখিয়ে থাকেন, দুর্গাপুজোর ক’টা দিনের জন্য। সন্ধ্যায় ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে যানজটে আটকে সময় নষ্ট হওয়া কখনওই কাম্য নয়। আমরা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের প্রতিটি বৈঠকেই এই বিষয়ে অনুরোধ করেছি। আশা করি, যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।’’ শ্রীরামপুর, চুঁচুড়ার মতো শহরে পুজো এবং বিসর্জনের দিনগুলিতে অটো-টোটো নিয়ন্ত্রণ করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ, রাজ্য বা জাতীয় সড়কে টোটো চলবে না। ওই সড়ক বা বাস চলে, এমন রাস্তার সংযোজক পথে শুধুমাত্র টোটো চলতে পারবে। এ ব্যাপারে পুলিশ এবং পুরসভাকে পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশের তরফে পুরসভাকে বলা হয়, প্রত্যেক পুর-এলাকায় কত টোটো চলে, তার তালিকা তৈরি করে পুলিশকে দিতে হবে। মাঝেমধ্যে প্রশাসন ও বিভিন্ন পুরসভা আশ্বাস দিলেও আদালতের নির্দেশিকা অবশ্য কার্যকর হয়নি। রাজ্য ও জাতীয় সড়কেও অবাধে টোটো চলছে। যানজটের শিকার হচ্ছে মানুষ।
উত্তরপাড়া স্টেশন রোড এবং কাঁঠালবাগান এলাকায় শ’য়ে শ’য়ে টোটো চলছে। কাঁঠালবাগান বাজারে রাস্তার উপরেই যাত্রী তোলার জন্য টোটো দাঁড়িয়ে থাকে। পথচলা দায় হয়। অথচ, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুর-কর্তৃপক্ষ বা পুলিশের কোনও হেলদোল নেই। অভিযোগ, বিরক্ত পথচারীরা টোটোচালকদের কিছু বলতে গেলে তাঁরা দুর্ব্যবহার করেন।
উত্তরপাড়ার বাসিন্দা, বৃদ্ধা পারুল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘টোটোর প্রয়োজন আছে, এটা বাস্তব। তাই বলে, পায়ে পায়ে টোটো! হাঁটার উপায় নেই। প্রয়োজন আছে বলে তো যা খুশি চলতে পারে না। টোটোর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করুক প্রশাসন।’’
পুলিশ কমিশনারের আশ্বাস, পুজোর মরসুম কেটে গেলে কমিশনারেটের প্রতিটি থানা এলাকায় যানজট নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিতে পদক্ষেপ করবে।