উলুবেড়িয়ার ওটি রোডে যানজট। নিজস্ব চিত্র
যানজট থেকে আপাতত মুক্তির কোনও আশা নেই উলুবেড়িয়ার বাসিন্দাদের। শহরকে যানজট-মুক্ত করার জন্য পরিকল্পনা ছিল কেমডিএ-র উদ্যোগে বাইপাস রাস্তা তৈরির। কিন্তু সেই পরিকল্পনা বিশ বাঁও জলে। কেএমডিএ সূত্রের দাবি, রাজ্যের কোষাগারের হাল শোচনীয়। টাকার অভাবেই কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। ওই রাস্তা তৈরি অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় যানজট থেকে আশু মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই নগরবাসীর।
গঙ্গারামপুর থেকে জেটিঘাট পর্যন্ত দু’কিলোমিটারের বাইপাস রাস্তাটির পরিকল্পনা ছিল ওটি রোডে সমান্তরাল। এর জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করেছে কেএমডিএ। এই সংস্থা সূত্রে খবর, ওটি রোড দিয়ে বাস, ট্রাক এবং ছোট গাড়ি মিলিয়ে প্রায় ১৭০০ গাড়ি রোজ চলাচল করে। তার উপরে আছে অসংখ্য টোটো। তার ফলে ওই পথে প্রতিদিন যানজটে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতাল, মহকুমাশাসকের অফিস, আদালতে যাতায়াত করতে মানুষের কালঘাম ছুটে যায়। গরুহাটা মোড়, স্টেশন রোডের মোড় প্রভৃতি জায়গায় দীর্ঘক্ষণ ধরে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে যানজটের জন্য। বাইপাস রাস্তা তৈরি হয়ে গেলে তার থেকে মুক্তি মিলবে বলে আশার কথা শুনিয়েছিলেন পুরকর্তারা।
এই বাইপাস রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা অবশ্য করা হয়েছিল বছর দশেক আগে। তখন পুরসভা নিজের উদ্যোগে সেই রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা করে। কিন্তু সমীক্ষা করে দেখা যায় প্রচুর খরচ। সে কারণে পুরসভা পিছিয়ে আসে। কিন্তু উলুবেড়িয়া লেভেল ক্রসিংয়ের উপরে উড়ালপুল তৈরির পর ফের নতুন করে বাইপাস রাস্তা তৈরির ব্যাপারে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। উড়ালপুল তৈরির কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শহরে বাইপাস রাস্তা তৈরি শুরু হয়ে যাবে বলে পুরসভা থেকে জানানো হয়েছিল। উড়ালপুল চালু হয়ে গিয়েছে প্রায় তিন বছর আগে। কিন্তু বাইপাসের কোনও কাজ শুরু হয়নি।
এই পরিস্থিতিতে পুরসভার পক্ষ থেকে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরকে বাইপাস রাস্তা তৈরিতে উদ্যোগী হওয়ার জন্য অনুরোধ করে পুরসভা। সেই অনুরোধের ভিত্তিতেই বছর পাঁচেক আগে পুর ও নগরোন্নময়ন দফতর কেএমডিএ-কে এই রাস্তা তৈরির দায়িত্ব দেয়। রাস্তাটি হওয়ার কথা মেদিনীপুর ক্যানেলের বাঁধের উপর দিয়ে। মেদিনীপুর ক্যানেলের উপরে দুটি পাকা সেতুও তৈরির কথা। মোট খরচ হওয়ার কথা ২৪ কোটি টাকা। পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর সূত্রের খবর, বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্টটি কেএমডিএ তৈরি করে এই দফতরে পাঠিয়েছে অনেকদিন আগে। অর্থ বরাদ্দ হলেই টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করে দেবে কেএমডিএ।
কিন্তু রাজ্য সরকার এখনও অর্থ বরাদ্দ তো করেইনি উল্টে তা নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্যও করছে না বলে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক কর্তা জানান। তাঁর কথায়, ‘‘যেহেতু রাজ্য সরকারের এখন আর্থিক সঙ্কট চলছে, তাই এই প্রকল্পে এখনই অর্থ বরাদ্দ করার কথা ভাবা হচ্ছে না বলে
রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।’’
একই কথা জানা গিয়েছে কেএমডিএ সূত্রেও। পুরসভা নির্বাচনের সময়ে বাইপাস রাস্তা তৈরিকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের পক্ষ থেকে। টাকা বরাদ্দের ব্যাপারে রাজ্য সরকারের মনোভাব জানার পরে হতাশা দেখা দিয়েছে পুর-কর্তাদের একাংশের মধ্যে। পুরসভার চেয়ারম্যান অভয় দাস অবশ্য বলেন, ‘‘বাইপাস রাস্তা আমাদের অগ্রাধিকার। আমরা পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। আশা করা যায় দ্রুত কাজ শুরু হয়ে যাবে।’’