প্রতীকী ছবি।
করোনা আবহে বিধিনিষেধের জেরে মানুষের আর্থিক স্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই মন্দা। তার উপর কয়েক দিনের ব্যবধানে হুগলি শিল্পাঞ্চলে দু’টি কারখানা (কুন্তীঘাটের কেশোরাম রেয়ন এবং চন্দনননগরের গোন্দলপাড়া জুটমিল) বন্ধ হল। সব মিলিয়ে বিপাকে পড়লেন দু’টি কারখানার অন্তত সাত হাজার শ্রমিক। কী ভাবে সংসার চালাবেন, সেই চিন্তায় তাঁরা দিশেহারা। এই নিয়ে শিল্পাঞ্চলে গত কয়েক বছরে কাজ হারানো শ্রমিকের সংখ্যা খুব কম করেও অন্তত ৫০ হাজার।
গত ২২ মে বন্ধ হয় কেশোরাম রেয়ন। ওই কারখানায় অন্তত আড়াই হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। সকলেই দুশ্চিন্তায় ডুবছেন। ১৯৯২ সাল থেকে ওই কারখানার ‘স্টোর’ বিভাগে কাজ করতেন প্রসেনজিৎ সাহা। তিনি বুধবার বলেন, ‘‘মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক দেবে। ছেলে মাধ্যমিক। ভেবে পাচ্ছি না কী করে সংসার চালাব আর কী করেই বা ছেলেমেয়ের পড়াশোনা চালাব? আমাকে এই বয়সে নতুন করে কে আর চাকরি দেবে?’’
একই পরিস্থিতি বিশ্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি ওই কারখানার ‘ইলেকট্রিক্যাল’ বিভাগের কর্মী ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘রুজির জায়গাটাই বন্ধ হয়ে গেলে কী করে সংসার টানব? কারখানায় দেড় মাসের বেতন বকেয়া। আমরা মনেপ্রাণে চাইছি, অবিলম্বে কারখানা খুলে যাক।’’
কারখানার দরজা খুলতে শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না ইতিমধ্যে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসেছেন। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁদের আর্থিক মন্দার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রীকে। রাজ্য সরকার অবশ্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে মিল খোলার শর্তে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে বলে খবর।
কারখানার ‘ইলেকট্রিক্যাল’ বিভাগের কর্মী, শাসকদলের শ্রমিক সংগঠনের যুগ্ম সম্পাদক চন্দন রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েক দিনের মধ্যে একটি বৈঠকের কথা রয়েছে। কর্তৃপক্ষ বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। এখন অপেক্ষা ছাড়া আমরা কী-ই বা করতে পারি?’’
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর গোন্দলপাড়া জুটমিল গত বছর খোলে। মিল বন্ধ থাকলে পরিস্থিতি ঠিক কী হয়, তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলেন শ্রমিকেরা। তাই শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার দাবিতে রাজ্যে যখন কাজ বন্ধ রেখেছিলেন অন্য কল-কারখানার শ্রমিকেরা, গোন্দলপাড়ার শ্রমিকেরা তখনও তাতে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে মিলে কাজ করেছেন। কিন্তু এরপরও মিল কর্তৃপক্ষ গত সোমবার শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে কারখানা বন্ধ করে দেন। মিলে চার হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করতেন। তাঁরা ফের অসহায়।
মিল ফের বন্ধের জন্য অবশ্য বিজেপি রাজ্য সরকারকেই দায়ী করেছে। দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি গৌতম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘নতুন কারখানা দূরঅস্ত্। যেগুলো চালু আছে সেগুলোও রাজ্য সরকার রক্ষা করতে পারছে না। একের পর এক বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ, মিলটা খোলার নেপথ্যে আমাদের সাংসদের বড় ভূমিকা ছিল।’’
শাসক দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব বিজেপির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, ‘‘মুখে অনেক কিছুই বলা যায়। কার্যক্ষেত্রে সবটা সোজা নয়। দু’টি কারখানাই দ্রুত খোলার জন্য রাজ্য সরকার আন্তরিক চেষ্টা চালাচ্ছে।’’
বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের বকেয়া আদায়ে চন্দননগরের শ্রমিক কল্যারণ সমিতি দীর্ঘদিন লড়াই চালাচ্ছে। সমিতির কর্ণধার বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজ্যস সরকারের কাছে আবেদন করে আসছি, এই সমস্ত কারখানা বন্ধকে বেআইনি ঘোষণা করতে। কিন্তু সরকার কর্ণপাত করছে না। সরকার ঘোষণা করলে শ্রমিকদের বকেয়া আদায় করতে সুবিধা হতো।’’