কুন্তীঘাট স্টেশনের প্রতিবন্ধীদের জন্য শৌচালয় বেহাল। ছবি: সুশান্ত সরকার ও বিশ্বজিৎ মণ্ডল
কোথাও দরজা ভাঙা, কোথাও নোংরার ছড়াছড়ি। দুর্গন্ধে ঢোকা দায়।
উৎসবের মরসুম। শীতও দোরগোড়ায়। এই সময়ে হুগলির উত্তরপাড়া, শ্রীরামপুর থেকে চন্দননগর, চুঁচুড়া হয়ে বলাগড় পর্যন্ত পযর্টক ও পিকনিক দলের ভিড় বাড়ে। যাঁদের অনেকেই ট্রেনে আসেন। কিন্তু স্টেশনগুলির শৌচালয়ের যা হাল, তাতে নিত্যযাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। জেলায় পর্যটনের ক্ষেত্রেও তা প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন অনেকে। এখনও প্রত্যেক স্টেশনে মহিলাদের শৌচাগার নেই। অনেক প্ল্যাটফর্মে তা থাকলেও তালাবন্ধ।
কোন্নগরের প্রবীণ বাসিন্দা শৈলেন পর্বত বলেন, ‘‘দিন কয়েক আগে শ্রীরামপুর স্টেশনে শৌচাগারে ঢুকতে গিয়েও পারিনি, এত অপরিষ্কার। মহকুমা শহরের ব্যস্ত স্টেশনের এই অবস্থা হলে অপেক্ষাকৃত ছোট স্টেশনের দশা সহজেই অনুমেয়।’’ এই স্টেশনের পাশে সুলভ শৌচাগার আছে। তবে এমন জায়গায়, তা খুঁজে পাওয়া কঠিন! শেওড়াফুলি, বৈদ্যবাটীতেও শৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। ভরসা সুলভ শৌচাগার। তবে, বৈদ্যবাটীতে যে সুলভ শৌচাগার রয়েছে, সহজে নজরে পড়ে না।
পূর্ব রেলের এক আধিকারিক জানান, প্ল্যাটফর্মের শৌচাগার পরিষ্কারের চুক্তি শেষ হয়েছে মাস দেড়েক আগে। নতুন চুক্তি না হওয়ায় নিয়মিত পরিষ্কার করা যাচ্ছে না। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্রের বক্তব্য, ‘‘প্রত্যেক স্টেশনে শৌচালয় রেলের বিধির মধ্যে পড়ে না।’’ তবে, অনেক স্টেশনে মহিলাদের শৌচাগার তালাবন্ধ থাকার সমস্যা তিনি মেনেছেন।
স্টেশনে শৌচাগারের অব্যবস্থায় মহিলাদের সমস্যা বেশি। নিয়মিত ট্রেনে যাতায়াত করেন, এমন বহু মহিলা জানান সে অভিজ্ঞতা। নিতান্ত ঠেকায় না পড়লে তাঁরা স্টেশনের শৌচাগারে যান না অপরিচ্ছন্নতা এবং দুর্গন্ধের কারণে। ত্রিবেণীর বাসিন্দা, কলেজ ছাত্রী মৌমিতা
সেন বলেন, ‘‘এক বার ব্যান্ডেল স্টেশনে গিয়েছিলাম। এত বড় একটা জংশন স্টেশনের শৌচালয় অত অপরিষ্কার হতে পারে!’’ উত্তরপাড়ায় পুরুষদের শৌচাগার অপরিষ্কার, ব্যবহারের অযোগ্য। দুর্গন্ধে দাঁড়ানো যায় না।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা কবিতা দে বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মে মহিলারা ছেলেদের শৌচাগারে ঢুকে পড়ছেন, এটা চেনা দৃশ্য। ভাবুন তো কতটা নিরুপায় হলে তাঁরা এটা করেন!’’ মানকুন্ডুর বাসিন্দা মৌমিতা মুখোপাধ্যায় জানান, মানকুন্ডু স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে মেয়েদের শৌচাগার নেই। স্টেশনের নীচে সুলভ শৌচাগার থাকলেও টাকার জন্য অনেকে যান না। দুর্গন্ধে চন্দননগর স্টেশনের শৌচাগারেও ঢোকা যায় না। চুঁচুড়াতেও একই অবস্থা। পর্যাপ্ত জল থাকে না।
পান্ডুয়া স্টেশনের শৌচালয় আবর্জনায় ভর্তি থাকে। নিত্যযাত্রী পায়েল দে’র অভিজ্ঞতা, ‘‘শৌচাগারে ঢোকা যায় না।’’ ব্যান্ডেল-নৈহাটি শাখায় হুগলিঘাট স্টেশন নতুন রূপে তৈরি হয়েছে। কিন্তু শৌচাগার করা হয়নি। বেহুলা, কুন্তীঘাটে প্রতিবন্ধীদের জন্য শৌচালয় রয়েছে। কিন্তু বেহাল। বেহুলারটিতে দরজা ভাঙা। সোমরা, বলাগড়, কুন্তীঘাটে মহিলাদের শৌচালয় থাকলেও বেশিরভাগ সময় অপরিষ্কার থাকে বলে অভিযোগ। বিভিন্ন স্টেশনে মহিলাদের শৌচাগার তালাবন্ধ থাকে। চাবি থাকে স্টেশন কার্যালয়ে। অনেকেই তা জানেন না।
শ্রাবণী মেলার সময় তারকেশ্বর স্টেশন হয়ে কাতারে কাতারে যাত্রী যাতায়াত করেন। অথচ এখানেও শৌচাগারের পরিকাঠামো তথৈবচ। তারকেশ্বর লাইন প্যাসেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হরদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বহু স্টেশনেই এই দুরবস্থা।’’