—প্রতীকী চিত্র।
লোকসভা নির্বাচনে চুঁচুড়া বিধানসভায় ৮ হাজারেরও বেশি ভোটে পিছিয়ে তৃণমূল। সেই ‘ভরাডুবি’র পরেই কি হুগলি-চুঁচুড়া পুর এলাকায় সমীকরণ বদলাচ্ছে তৃণমূলের অন্দরে! কারণ, বিধায়ক অসিত মজুমদারের অনুগামী বলে পরিচিত একাধিক পুরসদস্যকে (কাউন্সিলর) দেখা যাচ্ছে দলে তাঁর ‘বিরোধী’ বলে চিহ্নিত পুরপ্রধান অমিত রায়ের শিবিরে।
সংশ্লিষ্ট নেতারা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উড়িয়ে দিলেও রাজনৈতিক মহলে চর্চা থামছে না। তৃণমূলের একাংশও কিছু পুরসদস্যের ‘গোষ্ঠীবদলের’ কথা মানছে। সমাজমাধ্যমেও আভাস মিলছে।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির অঙ্কে লোকসভা নির্বাচনের সময়েও শহরে অসিতের দিকে ‘বেশি’ পুরসদস্য ছিলেন। কিন্তু, এখন অমিতের পালে হাওয়া বেড়েছে! পরিস্থিতি এমন জায়গায় যে, অসিত বা তাঁর অনুগামীদের কর্মসূচির পাল্টা অনুষ্ঠান করতে দেখা যাচ্ছে কিছু পুরসদস্য বা নেতাকে।
গত রবিবার, রথযাত্রার দিন ৩ নম্বর ওয়ার্ড তৃণমূলের উদ্যোগে রক্তদান শিবির হয়। মূল উদ্যোক্তা ছিলেন দলের ওয়ার্ড সভাপতি তথা ‘বিধায়কের লোক’ বলে পরিচিত বিশ্বজিৎ ভৌমিক। সেখানে অসিত, তাঁর ‘কাছের’ পুরসদস্য তথা প্রাক্তন পুরপ্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু অমিত বা স্থানীয় পুরসদস্য অনিন্দিতা মণ্ডল রাজবংশী ছিলেন না। ওই দিনেই রথযাত্রা উপলক্ষে বেরোনো মানুষদের জন্য খিচুড়ি ভোগের আয়োজন করেন অনিন্দিতা। সেখানে ছিলেন পুরপ্রধান। যাননি অসিত-গৌরীকান্তেরা। পুর-পারিষদ (স্বাস্থ্য) জয়দেব অধিকারী, শহর তৃণমূল সভাপতি সঞ্জীব মিত্রেরা ছিলেন অনিন্দিতার কর্মসূচিতে। তাঁদের রক্তদান শিবিরে দেখা যায়নি।
তৃণমূলেরই একটি অংশের দাবি, বিগত দিনে অসিত ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত সঞ্জীব, জয়দেবরা অমিতের হাত ধরছেন। একই অবস্থান নিয়েছেন ৩, ৫, ৭, ১৬, ১৮, ২৮ ইত্যাদি ওয়ার্ডের পুরসদস্যেরা। শুক্রবার শহর তৃণমূলের ডাকে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভায় ‘অমিতপন্থী’দেরই ভিড় দেখা গিয়েছে। অসিত বা তাঁর অনুগামীরা গরহাজির ছিলেন। আগামী সোমবার বিধানসভা তৃণমূলের ব্যানারে একই কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তাতে আহ্বায়ক হিসাবে গৌরীকান্তের নাম রয়েছে। তৃণমূলের অন্দরের খবর, সেখানে ‘অমিতপন্থীরা’ থাকছেন না।
একাধিক পুরসদস্য অসিতের প্রতি বিমুখ কেন?
পুরসভার ৩০টি ওয়ার্ডের মধ্যে লোকসভা নির্বাচনে ১৩টিতে তৃণমূল পিছিয়ে। তৃণমূল সূত্রে খবর, ফলাফলের জেরে অসিতের ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের পুরসদস্যদের। বিষয়টি তাঁদের অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। তাঁদের মধ্যে দুই পুরসদস্যের অভিযোগ, ‘‘বিধায়কের নানা ভুল পদক্ষেপের জন্যই গোটা বিধানসভায় এই ফল। উনি নিজের বুথে হেরেছেন, অথচ অন্যদের দোষারোপ করছেন। এটা মানা যায় না। আমরা তাই ওঁর সঙ্গে থাকতে রাজি নই।’’
গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা এক শিবির ছেড়ে অন্য গোষ্ঠীতে যোগ দেওয়ার কথা মানেননি অসিত, অমিত বা সঞ্জীব। বিধায়কের ব্যাখ্যা, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে যে কেউ দলীয় কর্মসূচি করতে পারেন। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট না হলেই হল।’’ সঞ্জীবের কথায়, ‘‘দলের নির্দেশেই ছোট-বড় বিভিন্ন স্তরে প্রস্তুতিসভা হচ্ছে। বিধায়ক এবং প্রত্যেক পুরসদস্যকে জানানো হয়েছিল। কাজ থাকায় সবাই হয়তো আসতে পারেননি!’’ অমিতের বক্তব্য, ‘‘আমন্ত্রণ পেলে সব জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করি। তবে, গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকলে হয়ে ওঠে না। বিধায়কেরও কাজ থাকতে পারে।’’