মনোরঞ্জন ব্যাপারী। — ফাইল চিত্র
ফেসবুকেই ঘোষণা করেছিলেন, ফেসবুক ছেড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি ফিরেছেন ফেসবুকে। বলেছিলেন, ফেসবুকে আর কিছু লিখবেন না। কিন্তু লিখেছেন। তিনি হুগলি জেলার বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী।
রবিবার ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘সুপ্রভাত বন্ধুরা। আজ আপনাদের একটা ভাল খবর শোনাব। এই যে আমি, আপনাদের মনাভাই, মনা’দা, এক সময় আমি সতেরো পয়সা দামের একটা পাউরুটির জন্য কত হাহাকার করেছি! সেই আমি আজকাল অনেক জনের ভাত তো তুচ্ছ, মাংস-মদের পর্যন্ত জোগান দিতে পারছি ভেবে পুলকিত হচ্ছি।’ মনোরঞ্জন কাদের মাংস-মদের জোগান দিতে পারছেন, তা নিয়ে নেটমাধ্যমে বেজায় বিতর্ক শুরু হয়েছে। তবে শাসকদলের বিধায়ক সোমবার দাবি করেছেন, ‘‘ওই পোস্টে মদ-মাংস শব্দবন্ধ ব্যঙ্গ করেই লেখা। এক শ্রেণির মানুষের ওই সব করেই পেট ভরছে। তাই লিখেছি।’’
কিছু দিন আগেই মনোরঞ্জনের একটি পোস্ট ঘিরে শোরগোল তৈরি হয়েছিল। তখন তিনি জানিয়েছিলেন, আপাতত নেটমাধ্যম থেকে সরে দাঁড়াবেন। তার পর দীর্ঘ দিন মনোরঞ্জনের ফেসবুক প্রোফাইল সীমাবদ্ধ ছিল বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রে একাধিক কর্মসূচি পালনের ছবি এবং তথ্য সম্পর্কে জনতাকে অবহিত করার মধ্যেই। রবিবার আচমকাই তাঁর ফেসবুকে প্রত্যাবর্তন। দলিত সাহিত্য অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান তথা বলাগড়ের বিধায়ক তাঁর পোস্টে কাদের নিশানা করেছেন? মনোরঞ্জনের জবাব, ‘‘আমি কেন অমানবিক উচ্চারণ করতে পারিনি। আমি কেন খৈনি খাই। আমি কেন সুখশয্যায় না শুয়ে গামছা বিছিয়ে আমগাছের ছায়ায় শুয়ে পড়েছি, আমি কেন দামি হোটেলে না খেয়ে মা ক্যান্টিনে লাইন দিয়ে ডিম্ভাত খাই— এ সব নিয়ে খবর করে কিছু জন আজকাল বেশ তেলেঝোলে থাকছে। আমি ভেবে পাই না, মানুষের কত সমস্যা, সেগুলো কি এঁদের চোখে পড়ে না? পেট্রোল-ডিজেলের দাম আকাশ ছুঁতে চলেছে। যার ফলে সমস্ত জিনিসের দাম বাড়ছে। প্রায় আট মাস রোদ, শীত, বৃষ্টি উপেক্ষা করে লক্ষ লক্ষ অন্নদাতা কৃষক দিল্লির রাস্তায় বসে আছে। সে নিয়ে সংবাদমাধ্যম নীরব। সময় নেই এদের সে দিকে চোখ ফেরাবার। এঁরা ক্যামেরা নিয়ে ঘুরছেন আমি কখন কার কাছে হাত পেতে খৈনি চেয়ে নেব, তেমন ছবি তোলবার চেষ্টায়। শাবাশ! এই তো চাই। চালিয়ে যাও ভাই। এ ভাবে একদিন ক্রমমুক্তি হবে।’
মনোরঞ্জনের আরও বক্তব্য, ‘‘নেতাদের মতো আচার-আচরণ শিখতে আমার একটু সময় লাগবে। ভেবেছিলাম নেটমাধ্যম থেকে সরে যাওয়ার কথা। তা লিখেওছিলাম। কিন্তু পাল্টা জবাব দিতে আমারও তো একটা মঞ্চ লাগবে! আমার পক্ষে থাকা বলাগড়ের বিপুল সংখ্যক লোকজন জবাব দিতে বলছেন। সেই কারণেই আমি দু’একলাইন লিখছি। এক দল লোকের কাজই হল বিতর্ক তৈরি করা। মানুষ আমাকে চেনেন, জানেন। যাঁরা কুৎসা করতে চান, তাঁরা করছেন। আমারও তো প্রতিপক্ষ আছে।’’
তাঁর ‘প্রতিপক্ষ’ কে বা কারা, তা জানাতে চাননি মনোরঞ্জন। বলেছেন, ‘‘বুঝে নিন।’’ দলের অন্দরেই কি তাঁর ‘প্রতিপক্ষ’ তৈরি হয়েছে? সে প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়েছে বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ‘‘আমি বিধায়ক হওয়ার পর থেকে এলাকার বেশকিছু প্রকল্প নিয়ে নাড়াচাড়া করছি। রেয়ন বন্ধ। অনেক কর্মী বেতনহীন অবস্থায় রয়েছেন। তা নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছি। সেটা নিয়ে একটা পর্যায়ে পৌঁছেছি। মানুষ আমার পাশেই আছেন। আমার এত জনপ্রিয়তা অনেকের সহ্য হচ্ছে না। আমার প্রতিপক্ষ যাঁরা, তাঁরা প্রকারান্তরে দলটারও ক্ষতি চান।’’ কিছুটা স্বগতোক্তির সুরেই মনোরঞ্জনের মন্তব্য, ‘‘আমার কী এমন কাজ আছে, যা নিয়ে এত ব্যঙ্গ করা যায়? রেয়নের মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকে চিন্তিত নন। তাঁরা চিন্তিত, আমার ‘অমানবিকতা’ উচ্চারণ আটকাচ্ছে, সেটা নিয়ে!’’
২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বলাগড় বিধানসভা কেন্দ্রে বিপুল ভোটে এগিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু বিধানসভায় আসনটি জিতেছেন মনোরঞ্জন। তাঁর ‘প্রতিপক্ষ’ কি সংখ্যায় অগণিত? মনোরঞ্জনের জবাব, ‘‘ওরা সংখ্যায় মুষ্টিমেয়। চার-পাঁচ জন সামনের সারিতে আছেন। তাঁদের পিছনে আছেন সাত-আট জন। আমার মনে হয় তাঁদের সীমাবদ্ধতা বলাগড়ের মধ্যেই আটকে রয়েছে। তাঁরা ক্রমাগত আক্রমণ চালাচ্ছেন। আর আমার ভাষাও ক্রমশ ধারালো হয়ে উঠছে।’’