মনোরঞ্জন ব্যাপারী। ফাইল চিত্র।
ফাটল এ বার আরও স্পষ্ট!
বলাগড়ের তৃণমূল বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী খোলাখুলি জানালেন, দলের ব্লক সভাপতি নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে পথ চলবেন না। প্রয়োজনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নবজোয়ার কর্মসূচিতে আলাদা ভাবে ভিড় জমাবেন। পঞ্চায়েত ভোটও করবেন আলাদা।
চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক ব্যক্তির থেকে টাকা নেওয়ারঅভিযোগ উঠেছিল নবীনের বিরুদ্ধে। দলের হস্তক্ষেপে টাকা ফেরাতে হয়। ওই ঘটনার পরে স্বচ্ছতার প্রশ্নে নবীনকে পদ থেকে সরানোর দাবি তোলেন বিধায়ক। দল অবশ্য নবীনেই আস্থা রেখেছে। তাতে ক্ষোভ গোপন করেননি মনোরঞ্জন। এখন তাঁর ‘একলা চলো’র ঘোষণায় তৃণমূল নেতৃত্ব যে অস্বস্তিতে, বলার অপেক্ষা রাখে না।
নবীন যথারীতি মুখ খোলেননি। জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর কিছু বলার নেই। যা বলার, জেলা সভাপতি বলবেন।
আগামী ৫-৭ জুন হুগলিতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেকের নবজোয়ার কর্মসূচি রয়েছে। সফরের শেষ দিন বলাগড় ব্লকের মহিপালপুর পঞ্চায়েতের কামারপাড়ায় অধিবেশন। তার আগে শাসক দলের অনৈক্য রাজনৈতিক মহলের চর্চায়।
রবিবার কামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে নবজোয়ারের প্রস্তুতি নিয়ে দলের হুগলি-শ্রীরামপুর জেলা সভানেত্রী রুনা খাতুনেরডাকা সভায় বিধায়ক বা তাঁরঘনিষ্ঠেরা যাননি। সোমবার বিধায়ক একই মাঠে ওই কর্মসূচির প্রস্তুতি সভা ডাকেন। সেখানে রুনা-নবীন বা তাঁদের গোষ্ঠীর কাউকে দেখাযায়নি। রবিবারের তুলনায় এ দিনভিড় বেশি হয়। উদ্যোক্তাদেরদাবি, দলের হাজার চারেক কর্মী এসেছিলেন।
সভায় বিধায়ক বলেন, ‘‘দল ব্লক সভাপতি ঘোষণার সময় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে ছিলাম। তীব্র বিরোধিতা করি। কারণ, এই লোকটা (নবীন) চাকরি দেওয়ার নাম করে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে খেয়ে ফেলেছেন। এই রকম লোককে ব্লক সভাপতি করলে সংগঠন দুর্বল হবে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসে আইপ্যাককে জানিয়েছিলাম। কিন্তু, আমার কথা মানা হয়নি।’’ বিধায়কের দাবি, বিধানসভা ভোটের সময় রুনা একটিও সভা করেননি। এর পরেই তাঁর ঘোষণা, ‘‘আগামী পঞ্চায়েত ভোটে নবীন গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করব না।’’
তাঁর বক্তব্য, ব্লক বা পঞ্চায়েত স্তরের যে নেতারা এই সভায় আসেননি, তাঁদের কথা শোনেননি, তাঁদের কথা তিনিও শুনবেন না। বিধায়কের কথায়, ‘‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মসূচিতে আমরা আমাদের মতো ভিড় করব।’’
বিষয়টি নিয়ে জেলা তৃণমূল সভাপতি অরিন্দম গুঁইনের জবাব, ‘‘দলের ভাল সবাই চান। বিধায়ক বা ব্লক সভাপতি, সকলের লক্ষ্যই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় লোক ভরানো। একই লক্ষ্যেই সবাই এগোচ্ছেন।’’ সে ক্ষেত্রে দলের পৃথক স্রোত হয়ে নবজোয়ারে শামিল হওয়া দল কী ভাবে দেখবে? এ বার অরিন্দমের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দল দলের মতো চলবে। কোথাও কোনও সমস্যা হলে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে মেটানো হবে।’’
শাসক দলে ‘ভিন্ন স্রোত’ নিয়ে বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। বিজেপির রাজ্যনেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘বিধায়ক রাগ করেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্লক সভাপতিকে দল না সরানোয়। দল কেন দুর্নীতিগ্রস্তকে সরায় না, গোটা বাংলা জানে। তা হলে দলটাই যে উঠে যাবে! নবজোয়ারের মূল স্রোতও বাদ পড়বেন না।’’