হারু হালদার। ছবি: সুশান্ত সরকার
বেজায় চিন্তায় পড়েছেন হারু হালদার।
দল আর ঠিকাদারির মধ্যে একটা বেছে নিতে হলে, তিনি দলকেই বাছবেন। দল, অর্থাৎ, তৃণমূল। ছেড়ে দেবেন ঠিকাদারি। কিন্তু, তা হলে এ তল্লাটের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবেন কী ভাবে! চিন্তা এটাই।
দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ঠিকাদারি করলে দল করা যাবে না। ফলে, দলের নানা পদে থেকে যাঁরা ঠিকাদারি করেন, তাঁরা কী করবেন, সেই প্রশ্ন উঠছে।
হুগলির বলাগড় ব্লকের সোমরা-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি হারু তেমনই একজন। স্ত্রীর নামে ঠিকাদারির লাইসেন্স। তবে, ব্যবসা নিজেই সামলান।
হারু তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা। এক সময় কংগ্রেস করতেন। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল তৈরির সময় থেকেই তিনি জোড়াফুলে। ওই বছর থেকে টানা চার বার সোমরা-২ পঞ্চায়েত সদস্য। তার মধ্যে ২০০৮ থেকে ’১৩ পঞ্চায়েত প্রধান। পরের বার সিপিএম পঞ্চায়েত দখল করলে তিনি বিরোধী দলনেতা। ’১৮ সালে ভোটে দাঁড়াননি।
বাম আমলে ধান কাটা, ধান ঝাড়া, পাট কাটা, রাজমিস্ত্রির জোগাড়ে, রঙের কাজ— সব করেছেন। তৃণমূল রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পরে তাঁর সুদিন আসে। এখন বড় দোতলা বাড়ি। জমি-জিরেত হয়েছে। শোনা যায়, কাঁচরাপাড়ার দিকে ফ্ল্যাটও আছে। এলাকার অনেকেই বলে থাকেন, এ সব ঠিকাদারির সুফল।
হারুর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘ঠিকাদারি না করলে খাব কী? আজ এর
বিয়ে, কাল কারও দেহ
সৎকার, পরশু কারও শ্রাদ্ধের মাছ বা মিষ্টি, কাউকে কলকাতায়, কাউকে ভেলোরে চিকিৎসার জন্য পাঠানোর খরচ— এ সবই বা কোথা থেকে দেব?’’ হারুর কথায়, তাঁর চাকরি-বাকরি নেই। দল থেকে আলাদা মাসোহারাও মেলে না। তাই ঠিকাদারি বা অন্য ব্যবসা না করলে পরিবার চলবে না। মানুষের পাশেও দাঁড়াতে পারবেন না। দীর্ঘ লকডাউন-পর্বে বহু মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন বলে হারুর দাবি।
হারুর মাছের ব্যবসাও আছে। জানান, ছোট থেকেই মাছ ব্যবসায় যুক্ত। এক সময় অসম, কোচবিহার, বিহারে গিয়েছেন মাছ নিয়ে।
এখন ১২টি পুকুর ইজারা নিয়ে মাছ চাষ করেন।
জৈষ্ঠের গনগনে দুপুরে পুকুরের পাড়ে বসে হারুর দাবি, বছর নয়েক ঠিকাদারি করছেন। তা-ও শুধুমাত্র নিজের পঞ্চায়েত এলাকায়। অনেক কাজ পান, এমনটা নয়। ফলে, এ থেকে উপার্জনও বিশাল কিছু নয়। সবুজ দ্বীপের একটি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি সংস্থার মাধ্যমে কাজ করে সমস্যায় পড়েছেন। ওই সংস্থার সঙ্গে রাজ্য সরকারের মামলা-মোকদ্দমার জন্য ওই কাজ স্থগিত রয়েছে। তাঁর ৩০ লক্ষ টাকা ওই সংস্থার কাছে আটকে।
হারুর কথায়, ‘‘ঠিকাদারি থেকে ক’পয়সা ইনকাম? পুকুর, জমির ব্যবসা থেকে উপার্জন হয়েছে। হ্যাঁ, কিছুই ছিল না। ইনকাম করে কিছু অ্যাসেট হয়েছে। হাতে নগদ টাকা কিন্তু কিছু নেই। বরং মার্কেটে এখনও ৩০ লক্ষ টাকা দেনা। ফ্ল্যাটের কথা ঠিক নয়। লোকে অনেক কিছুই বলে।’’
এর পরেই ওই তৃণমূল নেতা জানিয়ে দেন, দল যদি মনে করে, ঠিকাদারি না করলে দলের শ্রীবৃদ্ধি হবে, তা হলে ঠিকাদারি ছেড়ে দেবেন। ‘ভাল’ থাকার ভাবনা দূরে সরিয়ে জানিয়ে দেন, নুন-ভাত, ডাল-ভাত হলেই তাঁর চলে যাবে। দল তাঁর রক্তে। দল তাঁর নেশা।
ভাবনা শুধু গ্রামের গরিব মানুষকে নিয়ে।
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।