Nabanna Abhijan

হাওড়া সেতু-সহ পাঁচ জায়গায় অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল, নবান্ন অভিযান ঘিরে সুরক্ষার চক্রব্যূহ

অভিযান ঘিরে হাওড়া থেকে কলকাতায় আসার পথে যাত্রীদের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ ইউজিসি-র নেট পরীক্ষা আছে। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:২৯
Share:

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

আর জি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর ডাকা নবান্ন অভিযানে আজ, মঙ্গলবার কলকাতা ও হাওড়া থেকে একাধিক মিছিল আসার কথা। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, কলকাতায় প্রতিবাদীদের মিছিল আটকাতে ২৫ জন উপ-নগরপাল পদমর্যাদার অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাওড়া সেতুর কলকাতার দিকের অংশ-সহ পাঁচ জায়গায় থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল। যার সঙ্গে থাকবে কাঠের সিজ়ার ব্যারিকেড। হাওড়ার দিকে নবান্নে যাওয়ার পথে চার জায়গায় লোহার ব্যারিকেড তৈরি করা হচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের ধাক্কায় যাতে সেগুলি উপড়ে না আসে, তাই রাস্তায় গর্ত খুঁড়ে বড় লোহার পাইপের সঙ্গে ব্যারিকেডগুলি ঝালাই করে দেওয়া হচ্ছে।

Advertisement

তবে, আজকের অভিযান ঘিরে হাওড়া থেকে কলকাতায় আসার পথে যাত্রীদের সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আজ ইউজিসি-র নেট পরীক্ষা আছে। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য প্রশাসন কিছু পদক্ষেপ করেছে।

জানা গিয়েছে, হাওড়ার দিক থেকে কলকাতায় আসার জন্য যাত্রীদের মূলত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো এবং গঙ্গায় ফেরি পরিষেবার উপরে নির্ভর করতে হবে। সকালের দিকে পুলিশ রাস্তা বন্ধ না করা পর্যন্ত বিদ্যাসাগর সেতু দিয়ে বাস আসবে বলে জানিয়েছেন পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস দুপুরের দিকে করুণাময়ী থেকে চলতে পারে বলে সূত্রের খবর। নিবেদিতা সেতু দিয়ে ওই সব বাস কলকাতায় আসবে এবং ওই পথেই ফিরে যাবে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, কলকাতায় কলেজ স্কোয়ার থেকে একটি মিছিল শুরু হওয়ার কথা। শিয়ালদহ স্টেশন এবং শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিবাদীরা সেখানে জমায়েত হয়ে, মহাত্মা গান্ধী রোড এবং হাওড়া সেতু ধরে নবান্নের দিকে যেতে পারেন। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, হাওড়া সেতুর আগেই মহাত্মা গান্ধী রোড এবং স্ট্র্যান্ড রোডের সংযোগস্থলে এই মিছিলটি আটকানো হবে। তার জন্য সেখানে থাকছে লোহার গার্ডরেল এবং সিজ়ার ব্যারিকেড। হাওড়া সেতুতে ওঠার ঠিক মুখে রাখা হচ্ছে অ্যালুমিনিয়ামের ব্যারিকেড এবং কাঠের গুঁড়ি।

অন্য দিকে, হাওড়ার সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পথ বিদ্যাসাগর সেতুতে যাতে কোনও মিছিল উঠতে না পারে, সে জন্য সেতুতে ওঠার সমস্ত রাস্তায় থাকবে ব্যারিকেড। টার্ফ ভিউ রোড, হেস্টিংস মাজার, ফারলং গেট ও খিদিরপুর রোড থাকছে অ্যালুমিনিয়ামের গার্ডওয়াল।

এ ছাড়া, বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদীদের ঠেকাতে মজুত রাখা হচ্ছে পাঁচটি জলকামান। পাঁচ জায়গায় মোতায়েন থাকবে কলকাতা পুলিশের বিশেষ বাহিনী। নজরদারি চলবে ড্রোনের মাধ্যমেও।

এর পাশাপাশি, হাওড়াতেও থাকছে কঠোর পুলিশি বন্দোবস্ত। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের সাঁতরাগাছি সেতুর গ্যারাজ মোড়, আন্দুল রোডের লক্ষ্মীনারায়ণতলা, ফোরশোর রোড ও রামকৃষ্ণপুর লঞ্চঘাটমুখী রাস্তার সংযোগস্থল এবং জিটি রোডের বঙ্গবাসী মোড় ও মল্লিকফটকের সংযোগস্থল— এই চার জায়গায় থাকছে লোহার ত্রিস্তরীয় ব্যারিকেড। মোতায়েন করা হচ্ছে দু’হাজারের বেশি পুলিশকর্মী। থাকছেন চার জন এডিজি পদমর্যাদার পুলিশ অফিসার-সহ ১৩ জন ডিআইজি এবং ১৫ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক। প্রস্তুত রাখা হচ্ছে চারটি জলকামান। প্রতিটি ব্যারিকেডের সামনে লাগানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা। পুলিশ সূত্রের খবর, মিছিলের সম্ভাব্য পথগুলিতে থাকছে আরও ১০০টি অতিরিক্ত ক্যামেরা। বেলা ১১টার পর থেকে সমস্ত রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শুরু হবে।

নবান্ন অভিযানের প্রস্তুতি নিয়ে সোমবার হাওড়া শরৎ সদনে এডিজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) সিসরাম ঝাঝারিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের বৈঠক হয়। উপস্থিত ছিলেন হাওড়ার নগরপাল প্রবীণ ত্রিপাঠী-সহ রাজ্য পুলিশ ও হাওড়া সিটি পুলিশের কর্তারা। আজকের অভিযানের মোকাবিলায় বিভিন্ন পুলিশ কমিশনারেট ও জেলা থেকে অতিরিক্ত বাহিনী আনা হয়েছে বলে খবর। তবে মিছিলের বিস্তারিত সম্পর্কে ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’-এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের তরফে কোনও উত্তর মেলেনি বলেই জানাচ্ছে পুলিশ।

বাগনান, উলুবেড়িয়া, পাঁচলা, রানিহাটি-সহ গ্রামীণ হাওড়ায় মুম্বই রোডের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে পুলিশ প্রহরা থাকছে। গ্রামীণ জেলা পুলিশ সুপার স্বাতী ভাঙ্গালিয়া বলেন, "আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ যা করণীয়, সেই মতো পদক্ষেপ করবে।’’

সিপিএমের হাওড়া জেলা কমিটির দাবি, ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’কে মদত দিচ্ছে বিজেপি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ ঘোষ বলেন, "বিজেপি ছাত্র সমাজের নামে এই অভিযান করছে। সাধারণ মানুষ এবং ছাত্র সমাজ যে ভাবে পথে নেমেছেন আমরা তাঁদের সঙ্গে আছি। তবে, ছাত্র সমাজের বকলমে বিজেপির নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টায় আমরা নেই।’’ একই মন্তব্য করেছেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি পলাশ ভান্ডারীর। বিজেপির পাল্টা দাবি, এই অভিযানের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। বিজেপির হাওড়া গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণউদয় পাল চৌধুরী বলেন, ‘‘এই অভিযানের ডাক বিজেপি দেয়নি। নৈতিক সমর্থন থাকলেও দল হিসাবে বিজেপি এতে যোগ দেবে না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement