ফিভার ক্লিনিক চলছে শ্রীরামপুরে। নিজস্ব চিত্র
হুগলিতে ডেঙ্গি নিয়ে চিন্তায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সমস্যা বেশি উত্তরপাড়া, রিষড়া, শ্রীরামপুর শহরে। তিন পুরসভাই শ্রীরামপুর মহকুমায়। যে সব ওয়ার্ডে প্রকোপ বেশি, সেখানে ফিভার ক্লিনিক খোলা হয়েছে। চন্দননগর, চুঁচুড়া, আরামবাগ মহকুমায় বিক্ষিপ্ত ভাবে ডেঙ্গি হয়েছে।
চলতি বছরে হুগলিতে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১২০০ জন। মৃত্যু হয়েছে তিন জনের। গত বার আক্রান্ত হয়েছিলেন ৩৩৯ জন। কারও মৃত্যু হয়নি।
শ্রীরামপুর মহকুমা প্রশাসন সূত্রের দাবি, ডেঙ্গি রোধে লার্ভা মারতে ব্যবস্থার পাশাপাশি পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি জ্বরের খোঁজ নিচ্ছেন। তিন পুরসভাতেই এক জন করে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সামগ্রিক ব্যবস্থা তদারকি করছেন। মহকুমাশাসক সম্রাট চক্রবর্তীও পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখছেন। স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বুধবার রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা উত্তরপাড়ায় আসেন।
উত্তরপাড়া পুর-এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ৩শো। ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুই যুবক মারাও গিয়েছেন। প্রথমে যে সব জায়গায় প্রকোপ ছিল, সেখানে পরিস্থিতি কিছুটা বাগে এলেও নতুন এলাকায় ডেঙ্গি ছড়াচ্ছে। ১৭, ১৮, ১৯, ২০, ২১, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গির ব্যাপকতা বেশি।
শহরের চিকিৎসক ঐশ্বর্য্যদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘ডেঙ্গি-রোগী ভাল সংখ্যাতেই পাচ্ছি। এত রোগী অন্যান্য বছরে পাইনি।’’ পুরপ্রধান দিলীপ যাদব বলেন, ‘‘পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। জ্বরে আক্রান্তের খোঁজ পেলেই রক্ত পরীক্ষা করানো হচ্ছে। মশার লার্ভা চিহ্নিত করার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের কাজে লাগানো হচ্ছে।’’ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের সচেতনতা জরুরি। চায়ের ভাঁড়, ডাবের খোলা, গাছের টবে ডেঙ্গির মশার প্রচুর লার্ভা মিলছে।’’
শ্রীরামপুরে ২২ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি ভোগাচ্ছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, একটি আবাসন কমপ্লেক্সে জমা জলে পরিস্থিতি বিগড়েছে। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, ওই কমপ্লেক্সে নজর রাখা হচ্ছে। ৯, ১০, ১১ নম্বর ওয়ার্ডেও বেশ কয়েক জনের ডেঙ্গি হয়েছে। পুরপ্রধান গিরিধারী সাহা বলেন, ‘‘পুরসভা সজাগ। ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা নিখরচায় করা হচ্ছে পুরসভার ইএসওপিডি-তে।’’ তাঁর অনুযোগ, ‘‘অনেকের বাড়িতে ফ্রিজের নিচের অংশে, টবে প্রভৃতিতে জমা জলে মশার লার্ভা দেখা যাচ্ছে। মানুষকে সচেতন হতে হবে।’’ এই শহরের এক মহিলা ডেঙ্গিতে মারা গিয়েছেন।
রিষড়া শহরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীকৃষ্ণনগর এলাকায় ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে। পুরপ্রধান বিজয়সাগর মিশ্র বলেন, ‘‘মশার লার্ভা খাওয়ার জন্য নর্দমায় প্রচুর গাপ্পি মাছ ছাড়া হয়েছে। আর্থিক ভাবে দুর্বল মানুষের চিকিৎসা এবং রক্ত পরীক্ষা পুরসভার মাতৃসদনে নিখরচায় করা হচ্ছে।’’
গত জানুয়ারি থেকে আরামবাগ মহকুমায় ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ জন। বুধবার মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ৭ জন। আরামবাগ পুর-এলাকায় অবশ্য ডেঙ্গি পজ়িটিভ মেলেনি।
জেলা প্রশাসনের দাবি, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে গ্রামে পাড়া এবং পুরসভার ওয়ার্ড ধরে নিবিড় নজরদারি চলছে। জেলায় আজ, সোমবার থেকে টানা ১৮ দিন কেন্দ্রীয় স্বচ্ছ মিশন প্রকল্পে ‘স্বচ্ছতা হি সেবা’ (পরিচ্ছন্নতায়ই সেবা) কর্মসূচি চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সচিব তাপস বিশ্বাস। রাজ্যের নির্দেশে, গত ২৯ অগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বরগ্রামীণ এলাকায় কচু, কলা গাছ, বাঁশ ঝাড়ের গোড়া, মাটির ভাঁড়, প্লাস্টিকের কাপ ইতাদি সাফাই, দেব-দেবীর মঙ্গলঘট, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদিতে জমা জল ফেলে দেওয়া, নর্দমা পরিষ্কার, মন্দির-মসজিদ, হাট-বাজার সাফাই করা হয়। তবে, ওই কাজ সর্বত্র যথাযথ ভাবে হয়নি বলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ।
জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলার গ্রামীণ এলাকায় কয়েকটি জায়গায় ডেঙ্গি ছড়িয়েছিল। তবে, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।’’