জাল ফেলে স্থানীয়দের উদ্যোগে চলছে খোঁজ। ছবি: সুব্রত জানা
দামোদরে স্নান করতে নেমে শুক্রবার মৃত্যু হল হাওড়ার তিন যুবকের। এখনও নিখোঁজ তাঁদের আরও এক বন্ধু।
এ দিন দামোদর নদের উদয়নারায়ণপুরের খিলা নয়াচক ঘাটে তলিয়ে গিয়েছিলেন মোট ১১ জন যুবক। শুক্রবার দুপুরের ওই ঘটনায় সাত জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। ডুবুরি নামিয়ে সন্ধ্যায় তিন জনের দেহ উদ্ধার হয়। নিখোঁজ আরও এক জন। এঁদের প্রত্যেকের বাড়ি হাওড়ার দাশনগরের দক্ষিণ শানপুর বটতলায় বলে জানিয়েছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, মৃত দুই যুবকের নাম সুমন সাঁপুই (২০), শুভজিৎ মণ্ডল (২২) এবং স্বর্ণেন্দু পাত্র (২২)। রাত পর্যন্ত নিখোঁজ যুবকের নাম তন্ময় দাস (২১)।
দুর্ঘটনার খবর বটতলায় পৌঁছতেই গোটা পাড়ায় শোক নেমে আসে। সূত্রের খবর, ওই পাড়ার প্রায় প্রতি বাড়িতেই লেদ যন্ত্রের কারখানা রয়েছে। সব কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বটতলা এলাকার অধিকাংশ বাসিন্দার আদিবাড়ি আমতা, উদয়নারায়ণপুরে। প্রতি বছরই অমাবস্যায় কালীপুজো উপলক্ষে তাঁরা নিজের নিজের গ্রামে যান। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অন্যান্যদের সঙ্গে বটতলার ১১ জন যুবকও বৃহস্পতিবার দুপুরে মোটরবাইকে রওনা হয়েছিলেন। আমতার বালিচকের সাহাচক পাড়ায় এক বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশে তাঁরা বেরিয়েছিলেন। রাতভর সেখানেই কালীপুজো দেখেন তাঁরা। বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ১১ জন বন্ধু মিলে ওই গ্রাম থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে দামোদরের উদয়নারায়ণপুরের খিলা নয়াচক ঘাটে স্নান করতে নামেন।
পুলিশ জানিয়েছে, তখন ভরা কোটালের জোয়ার চলছিল। কিছু ক্ষণ স্নান করার পরেই স্রোতের টানে একে একে ১১ জনই ভেসে যেতে থাকেন। সেই সময়ে পাশের জমিতে চাষের কাজ করছিলেন কয়েক জন। তাঁরা ঘটনাটি দেখতে পেয়ে বাঁচাতে ছুটে যান। ছ’জন নিজের চেষ্টায় কোনও ক্রমে পাড়ে উঠে এলেও বাকি পাঁচ জন পারেননি। তাঁদের মধ্যে এক জনকে চাষিরাই উদ্ধার করেন। তাঁকে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বাকি চার জনকে উদ্ধার করতে গ্রামবাসীরা মাছ ধরার জাল ফেলে সাধ্যমতো অনুসন্ধান চালান।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এলাকায় আসেন উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজা। বিকেলে নিখোঁজদের সন্ধান শুরু করে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। তাতেই মেলে সুমন, শুভজিৎ আর স্বর্ণেন্দুর দেহ। তবে বটতলার বাসিন্দাদের ক্ষোভ, তলিয়ে যাওয়ার এত ঘণ্টা পরে উদ্ধার করতে কেন ডুবুরি নামানো হল?
এ দিন বিকেলে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের লাইন সংলগ্ন বটতলায় গিয়ে দেখা যায়, কার্যত গোটা এলাকার মানুষ নেমে এসেছেন রাস্তায়। অলিগলিতে বাসিন্দাদের জটলা। সন্ধ্যায় একের পর এক দেহ উদ্ধারের খবর পৌঁছতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় শানপুর সৎকাজ সমিতির মাঠের ভিড়ে দাঁড়ানো সুভাষ দাস নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘এমন মর্মান্তিক খবর এর আগে এই এলাকায় শুনিনি। সুমন, শুভজিৎ আর স্বর্ণেন্দুর বাড়িতে কী ভাবে খবরটা দেওয়া হবে ভাবতে পারছি না। এ দিকে বোঝাই যাচ্ছে তন্ময়ের পরিণতি কী হয়েছে। মাথায় ঢুকছে না তরতাজা ছেলেগুলোর মৃত্যু বাবা-মায়েরা কী ভাবে মানবেন। তাই ওঁদের বাড়িতে কাউকে যেতে দিচ্ছি না।’’ অন্য এক বাসিন্দা অশোক চাউলে বলেন, ‘‘ওঁরা প্রত্যেকেই বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। ওঁদের কী ভাবে সামলানো হবে, সেটাই ভেবে অসহায় লাগছে।’’