পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার-টেবিল। মঙ্গলবার সি কম কলেজে। —নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতের ভোট-পর্বে হাওড়ায় তেমন কোনও ঝামেলা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু তার শেষটা হল বড় অশান্তি দিয়ে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে সাঁকরাইল ব্লকের গণনাকেন্দ্র সি কম কলেজে পুলিশের সামনেই এলাকার বিধায়ক প্রিয়া পালের নেতৃত্বে তাণ্ডব চলে বলে অভিযোগ। গণনাকর্মীদের অভিযোগ, চেয়ার-টেবিল ভাঙচুরের পাশাপাশি ব্যালট বাক্স খুলে পেপার ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। বাধা দিতে এলে ৯ ও ১৩ নম্বর-সহ কয়েকটি হলে বিরোধী প্রার্থী ও তাঁদের এজেন্টদের মারধর করা হয়। খুনের হুমকি দেওয়া হয় গণনাকর্মীদের। শুধু তাই নয়, বিধায়ক নিজে নির্বাচনে জয়ী বিরোধী প্রার্থীদের শংসাপত্র ছিঁড়ে ফেলেনবলে অভিযোগ।
ঘটনার প্রতিবাদে ভোটকর্মীরা শুধু ৬ ঘণ্টা কাজ বন্ধই করে দেননি, রাস্তায় বেরিয়ে এসে নিরাপত্তার দাবিতে রীতিমতো বিক্ষোভ দেখালেন। আর এই অশান্তির জেরে গণনার যে কাজ মঙ্গলবার গভীর রাতে শেষ হওয়ার কথা, সেটা শেষ হতে পেরিয়ে গেল বুধবার সকাল।
মঙ্গলবার সকাল থেকে সাঁকরাইল ব্লকের গ্রামসভা, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের গণনা চলছিল লেজে। এ দিন দুপুর ২টোর পর থেকে দ্বিতীয় দফার গণনা শুরু হয়। প্রথমে পরিস্থিতি ঠিক ছিল। কিন্তু বিকাল ৪টে নাগাদ ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে পিছিয়ে পড়ার খবর পেয়েই সেখানে হাজির হন প্রিয়া। অভিযোগ, তিনি দলবল নিয়ে জোর করে তালা খুলিয়ে গণনা কেন্দ্রে হুড়মুড়িয়ে ঢোকার পরই পুরো পরিবেশ বদলে যায়।
সিপিএমের সাঁকরাইল দক্ষিণ এরিয়া কমিটির সম্পাদক সমীর মালিক বলেন, ‘‘আমার সামনে বিধায়ক জোর করে ৯ নম্বর গেট খুলে ভেতরে দলীয় কর্মীদের ঢুকিয়ে দেন। এরপর এক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চলে।’’ স্থানীয় বিজেপি নেতা প্রভাকর পণ্ডিতের অভিযোগ, ‘‘বিরোধী দলের জয়ী প্রার্থীদের শংসাপত্র ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তৃণমূল যদি এটাকে জয় বলে মনে, তা হলে ভুল ভাবছে।’’
বিরোধী ও ভোটকর্মীদের অভিযোগ, পুলিশ এই ঘটনায় বাধা দেয়নি। গণনাকেন্দ্রের ভিতরে কেন্দ্রীয় বাহিনী ও রাজ্য পুলিশ বাহিনী বসে থাকলেও হলগুলিতে তাঁদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। এক গণনাকর্মী বলেন, ‘‘সাঁকরাইল থানার একজন পদস্থ কর্তা গণনাকেন্দ্রের ৯ ও ১৩ নম্বর হলে ঘুরে যাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে এই হামলা হয়েছে। এটা একেবারে পূর্ব পরিকল্পিত। সেই সময় কাউন্টিং হলে একজন পুলিশ কর্মী ছিলেন। তিনি তো ছিলেন দর্শক।’’
এই ঘটনার প্রায় ৬ ঘণ্টা পরে কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে ফের গণনার কাজ শুরু হয়। তবে এটাই শেষ নয়। বুধবার ভোর ৪টে নাগাদও গণনার কাজে থাকা বিরোধীদলের এজেন্টদের বার করে দিয়ে, বাকি গণনার কাজ চালানো হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের সাঁকরাইল উত্তর কমিটির সম্পাদক অপর্ণা দত্ত বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের গণনার সময় বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিএমের তরফে কেউ ছিলেন না। তৃণমূল চুরি করে জিতেছে।’’
অভিযোগ নিয়ে সিটি পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, বিষয়টি তাঁদের কানেও এসেছে। প্রকৃতপক্ষে ঠিক কি ঘটেছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাঁকরাইল এলাকা বরাবরই রাজনৈতিক দিক থেকে শান্তিপূর্ণ। সেই পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় ঘটনার নিন্দা করেছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা, কর্মী-সমর্থকরাও। তৃণমূলের এক জয়ী প্রার্থী বলেন, ‘‘ঘটনাস্থলে ছিলাম। হামলার বিষয়টি ঠিক হয়নি। আমরা হারি-জিতি, এলাকায় সকলেই মিলেমিশে থাকি। আমারই পড়শির উপর বাইরের লোকের হামলা, মানতে কষ্ট হচ্ছে। এ ভাবে আমরাজয় চাই না।’’
আর ঘটনা প্রসঙ্গে বিধায়ক প্রিয়াকে ফোনে বারবার চেষ্টা করলেও তিনি ধরেননি। এমনকি এসএমএসেরও উত্তর দেননি। তবে দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের গ্রামীণ জেলা সভাপতি অরুণাভ সেন বলেন, ‘‘বিষয়টি শুনেছি। দলীয় স্তরে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’