থ্যালাসেমিয়া দিবসে উলুবেড়িয়ায় পদযাত্রা আক্রান্তদের। নিজস্ব চিত্র
থ্যালাসেমিয়ার মতো মারণ রোগের প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব। সেই সঙ্গেই প্রয়োজন সতর্কতারও। সচেতনতা গড়ে তুলতেই প্রতি বছর ৮ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস। সেই সচেতনতা প্রচারেই রবিবার বিকেলে উলুবেড়িয়া স্টেশন থেকে মহকুমা হাসপাতাল পর্যন্ত হাঁটলেন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু ও তাদের পরিজনরা। প্রত্যেকের হাতের পোস্টারে লেখা ছিল, ‘থ্যালাসেমিয়া রক্ত পরীক্ষা করুন’, ‘থ্যালাসেমিয়া রক্তপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হোক’।
চিকিৎসকদের মতে, থ্যালাসেমিয়া রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় রক্ত পরীক্ষা। বিয়ের আগে রক্ত পরীক্ষা করলে এ বিষয়ে অনেকটাই সাবধান হওয়া যায়। তবে এ বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে বলে স্বীকার করছে স্বাস্থ্য দফতর। হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেকটি মহকুমা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার জন্য ইউনিট আছে। এবং বিভিন্ন স্কুল-কলেজে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষার জন্য শিবির করা হয়।
উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালের থ্যালাসেমিয়া হিমোফিলিয়া কাউন্সিলর রূপ কল্যাণ বলেন, ‘‘সপ্তাহে দু’দিন হাসপাতালের নিজস্ব ইউনিটে এই পরীক্ষা হয়। এর জন্য কোনও খরচ লাগে না। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, মানুষ অসুস্থ হলে তবে এই পরীক্ষা করাতে আসেন। না হলে এই পরীক্ষা নিয়ে অধিকাংশ মানুষই সচেতন নন।’’
ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উলুবেড়িয়া ইউনিটের সম্পাদিকা চিকিৎসক অনুরাধা ঘোষ বলেন, ‘‘সরকার আইন করে যে ভাবে নাবালিকা বিয়ে বন্ধে উদ্যোগী হয়েছে, সেভাবেই বিয়ের আগে এই রক্ত পরীক্ষাও বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। আরও বেশি সচেতনামূলক প্রচার প্রয়োজন। মানুষ সচেতন হলেই এই রোগকে প্রতিরোধ করা যাবে।’’
হাওড়ার রক্তদাতাদের একটি সংগঠনের সম্পাদক শাশ্বত পাড়ুই বলেন, ‘‘কত শিশু এই রক্ত না পেয়ে মারা যাচ্ছে। গরমে রক্ত জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যায়। অথচ মানুষের একটু সচেতনতাই এই থ্যালাসেমিয়ায় লাগাম দিতে পারে। এই রক্ত পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করার আইন প্রণয়ন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির দফতরে আবেদনপত্র পাঠানো হবে।’’
ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে এ দিন পথ হাঁটলেন উলুবেড়িয়ার এক মহিলা। তাঁর কথায়, ‘‘ঘটি-বাটি বিক্রি করেও মেয়েটার চিকিৎসা করাচ্ছি। আগে আমরা রক্তপরীক্ষা করালে মেয়েটাকে এত কষ্ট পেতে হত না। সকলকে অনুরোধ, আমরা যে ভুলের খেসারত দিচ্ছি সেই ভুল আর কেউ করবেন না। সাধারণ একটা রক্তপরীক্ষা অনেকগুলো জীবন বাঁচাতে পারে।’’