খালনা যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ে চারজন ছাত্রীকে নিয়ে চলছে পড়া। নিজস্ব চিত্র।
দু’জন শিক্ষিকা, ছাত্রী পাঁচ জন— এই নিয়েই চলছে জয়পুরের খালনা যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়।
১৯২৫ সালে পথচলা শুরু করেছিল এই স্কুল। সেই হিসাবে আর মাত্র দু’বছর পরে স্কুলের শতবর্ষ পালিত হওয়ার কথা। কিন্তু তত দিন স্কুলটি চালু থাকবে কি না, তা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে! কারণ, দুই চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী অবসর নেবেন আগামী ছ’মাসের মধ্যে। দুই শিক্ষিকাও অন্য স্কুলে বদলি চেয়ে বিভিন্ন মহলে আবেদন শুরু করেছেন।
যে এলাকায় স্কুলটি অবস্থিত, সেখানে অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষের বাস। এলাকার মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এলাকার বাসিন্দাদের উদ্যোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ছিল জুনিয়র হাই স্কুল। ১৯৯৬ সালে স্কুলটি মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়। প্রায় পাঁচশো ছাত্রী এখানে পড়াশোনা করত। শিক্ষিকা ছিলেন ১২ জন।
২০০০ সালের গোড়া থেকে ছাত্রীর সংখ্যা কমতে শুরু করে। এই স্কুলটি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ১৯৬৪ সালে তৈরি হয় খালনা বালিকা বিদ্যামন্দির। সেটি বাগনান খালনা রাস্তার ধারে। যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয় থেকে পড়ুয়ারা সেখানে ভর্তি হতে শুরু করে। অভিভাবকদের বক্তব্য, যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়টি গ্রামের অনেক ভিতরে অবস্থিত। অন্য দিকে, বালিকা বিদ্যামন্দির রাস্তার একেবারে ধারে। ফলে সেখানে যাতায়াত সুবিধাজনক।
তা ছাড়া, এই স্কুলের ভবনেই একটা অংশে চলে প্রাথমিক স্কুল। সেখানকার পড়ুয়ারাও হাইস্কুলে ভর্তি হচ্ছে না বলে স্কুল সূত্রের খবর।
ছাত্রী কমলেও ২০১১ সালে যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়ে স্কুল সার্ভিস কমিশন শিক্ষিকা নিয়োগ করেছিল। তারপর থেকে অবশ্য আর কোনও নিয়োগ হয়নি। উল্টে কয়েক জন শিক্ষিকা অবসর নেন। কয়েক জন বদলির আবেদন করে অন্য স্কুলে চলে যান। এখন
আছেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা সহ
দু’জন। ছাত্রী পাচঁ জন। এক জন
আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। তবে এই স্কুলে শিক্ষিকার সংখ্যা অপ্রতুল হওয়ায় সেই ছাত্রীর পঠনপাঠন চলছে বালিকা বিদ্যামন্দিরে।
বাকি চার ছাত্রীর মধ্যে তিন জন পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে। এক জন পঞ্চম শ্রেণিতে। চার জনকে একই ক্লাসে বসিয়ে পড়ানো হয়। চার জনের জন্য মিড ডে মিল রান্না হয়। কী ভাবে স্কুলের প্রাণ ফেরানো সম্ভব, তা বুঝতে পারছেন না শিক্ষিকা মল্লিকা মজুমদার। তিনি জানান, এই চার ছাত্রীর অভিভাবকেরাও আগামী শিক্ষাবর্ষে মেয়েদের ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেন বলে এখন থেকেই লিখিত আবেদন করেছেন।
খালনা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান নবকুমার সানা বলেন, "প্রাচীন যোগমায়া বালিকা বিদ্যালয়কে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। একটা সময়ে শিক্ষিকাদের সঙ্গে নিয়ে অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়েছি যাতে তাঁরা এখানে ছাত্রী পাঠান। কিন্তু কোনও ফল হয়নি।’’ আমতার বিধায়ক তথা বিধানসভার শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য সুকান্ত পাল বলেন, ‘‘দুই শিক্ষিকা অন্য স্কুলে বদলি চেয়ে আমার কাছেও আবেদন করেছেন। আমি পুরো বিষয়টি শিক্ষা দফতরকে জানিয়েছি।’’
স্কুলের দোতলা ভবন এক সময়ে ছাত্রীদের কলরবে মুখর হয়ে উঠত, এখন সেগুলি খাঁ খাঁ করছে।
মল্লিকা বলেন, "এই পরিবেশ ভাল লাগে না। আমাদের দ্রুত বদলি করে দেওয়া হোক।’’