পড়ুয়াদের মাদ্রাসায় ফেরাতে খাজনাবাহালা হাইমাদ্রাসার শিক্ষকদের গ্রামে অভিযান। নিজস্ব চিত্র
এক জন দশম শ্রেণির ছাত্রী। অন্য জন দ্বাদশের। দু’জনেই বিবাহিত। দু’জনেই অন্তঃসত্ত্বা।
‘মাদ্রাসাছুট’ ছাত্রছাত্রীদের ফেরাতে গত সপ্তাহে ‘অভিযানে’ নেমে প্রথমে থ হয়ে গিয়েছিলেন শ্যামপুরের খাজনাবাহালা হাইমাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকারা। তাঁরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নেন, এখন ক্লাসে ডাকা নয়, ওই ছাত্রীদের স্বাস্থ্যের দিকেই তাঁদের বেশি নজর দিতে হবে। কারণ, দু’জনেই শীর্ণ হয়ে পড়েছে।
প্রথম দিন ওই ছাত্রীদের নিজেদের স্বাস্থ্য ভাল রাখার পরামর্শ দিয়ে ফেরেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। সোমবার তাঁরা ফের ছাত্রীদের বাড়িতে গিয়ে পুষ্টিকর খাবার এবং আয়রন ট্যাবলেট দিয়ে আসেন। কিন্তু আজ, মঙ্গলবার থেকে দু’জনেরই টেস্ট পরীক্ষা শুরু। স্বাস্থ্যের কারণেই আর মাদ্রাসায় ফিরতে রাজি নয় ওই ছাত্রীরা। দু’জনকে বুঝিয়ে শুধু পরীক্ষাতে বসতে রাজি করিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
প্রধান শিক্ষক মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘‘মাদ্রাসায় ওদের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স রাখা থাকবে। টেস্টে না বসলে বছরটা নষ্ট হবে। ওদের পরিবার হতদরিদ্র। ওদের এবং গর্ভস্থ
সন্তানদের স্বাস্থ্য নিয়ে আমরা উদ্বিঘ্ন। তাই ওদের জন্য পুষ্টিকর খাবার, আয়রন ট্যাবলেট দিচ্ছি। ১৫ দিন অন্তর শিক্ষিকারা ওদের বাড়িতে গিয়ে খোঁজ নেবেন। পড়াশোনাও দেখিয়ে দেবেন। গ্রামের আশাকর্মীদেরও বলে দেওয়া হয়েছে ওদের নিয়মিত দেখভালের জন্য।’’
এই মাদ্রাসায় পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৮৬১। ১৬ নভেম্বর মাদ্রাসা খোলার পরে দেখা যায়, প্রথম দিন হাজির মাত্র ২০ শতাংশ পড়ুয়া। পরের দিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ শতাংশে। হাজিরা বাড়াতে ছাত্রছাত্রীদের ফোন করতে শুরু করেন শিক্ষকেরা। অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠকও হয়। তাতে হাজিরা কিছুটা বাড়লেও সন্তুষ্ট হননি শিক্ষকরা। তারপরেই তাঁরা গরহাজির পড়ুয়াদের বাড়িতে ‘অভিযান’ চালানোর
সিদ্ধান্ত নেন।
জগদীশপুর গ্রামে দুই ছাত্রীর বাড়ি পাশাপাশিই। করোনাকালে বিয়েও হয়েছে পাড়াতেই। তারা এখন আছে বাপের বাড়িতে। দু’জনের মধ্যে দ্বাদশের ছাত্রী সাবালিকা। ওই দু’জন-সহ মাদ্রাসার বেশিরভাগ পড়ুয়াই নিম্ন আয়ের সংখ্যালঘু পরিবারের। ‘অভিযানে’ বেরিয়ে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা, লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেক পড়ুয়াই পড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছে। কেউ চেন্নাইয়ে, আবার কেউ আগরতলাতেও চলে গিয়েছে
কাজের খোঁজে। বেশ কিছু ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
শিক্ষকদের দাবি, তাঁদের অভিযানের ফলে বেশ কিছু ‘মাদ্রাসাছুট’কে ফেরাচ্ছেন অভিভাবকরা। অনেকে ফেরাবেন বলে কথাও দিয়েছেন।
মনিরুল বলেন, ‘‘ফোনে যোগাযোগ, অভিভাবকদের সঙ্গে বৈঠক এবং বাড়ি বাড়ি অভিযানে ফল ফলেছে। হাজিরা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। এটা সাধারণ স্কুলছুট নয়। একটা বিশেষ পরিস্থিতির শিকার পড়ুয়ারা। আমরা আশা করি সবাইকে ফিরিয়ে আনতে পারব। বিয়ে হয়ে যাওয়ায় যে সব ছাত্রী মাদ্রাসায় আসতে চাইছে না, তারাও যাতে পড়া না ছাড়ে সেটাও দেখা হবে।’’