প্রবীণদের বাড়ি গিয়ে টিকা। চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের কোদালিয়া-১ পঞ্চায়েতে। ছবি: তাপস ঘোষ।
করোনার ঊর্ধ্বগতিতে অনেকটা লাগাম পরেছে। কিন্তু এখনও যাঁরা টিকাকরণের আওতার বাইরে থেকে গিয়েছেন, তাঁদের নিয়েই চিন্তিত স্বাস্থ্য দফতর।
হুগলিতে টিকাকরণের কাজ চলছে ধীরে। শারীরিক অসুস্থতা, প্রতিবন্ধকতা বা বয়সের কারণে যাঁরা টিকাকরণ কেন্দ্রে পৌঁছতে পারেননি, তাঁদের বাড়িতে গিয়েও টিকা দেওয়া হচ্ছে কোনও কোনও জায়গায়। কিন্তু, অনেকেই রয়েছেন যাঁরা টিকা নিতে মানসিক ভাবে প্রস্তুত নন। স্বাস্থ্যকর্তাদের চিন্তা তাঁদের নিয়েই। তাঁরা যাতে টিকা নেন, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা চলছে বলে জেলার স্বাস্থ্যকর্তারা জানিয়েছেন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমা ভুঁইয়া বলেন, ‘‘টিকা নিতে কাউকে জোর করা যাবে না। যতটা সম্ভব বুঝিয়ে তা করার চেষ্টা করা হবে।’’ তিনি জানান, জেলায় স্বাস্থ্য দফতরের যে ৬৭২টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে, আশাকর্মী এবং অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা সেখানে পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে দু’দিন টিকা দিচ্ছেন। বৃহস্পতিবার তাঁরা সরাসরি প্রত্যন্ত গ্রামেও বাড়িতে চলে যাচ্ছেন। যাঁরা উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসতে পারছেন না, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে। জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘আমাদের জেলায় ৯০ শতাংশের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। যাঁরা বাকি, তাঁদের যাতে দ্রুত টিকাকরণ হয়, সেই পরিকল্পনা চলছে।’’
বিভিন্ন শহরে যাঁরা টিকা নেননি, তাঁদের চিহ্নিত করতে পুরসভাকে ভোটার তালিকা দেখে সমীক্ষার পরামর্শ দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। বিভিন্ন জায়গায় সেই কাজ শুরু হয়েছে। কোথাও পরিকল্পনা চলছে। উত্তরপাড়ার পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব বলেন,
‘‘যাঁরা ভ্যাকসিন এখনও নেননি, তাঁদের তালিকা যথাসম্ভব নিখুঁত
ভাবে তৈরি করতে চাইছি। কিন্তু ভ্যাকসিন না নিয়েও কেউ যদি ‘নিয়েছি’ বলেন, সে ক্ষেত্রে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা। এ নিয়ে রাস্তা বের করতে
শীঘ্রই পুর-প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসব।’’
বাঁশবেড়িয়া শহরে যাঁরা ভ্যাকসিন নেননি, তাঁদের চিহ্নিত করতে পুরকর্মীরা ভোটার তালিকা ধরে বাড়ি বাড়ি সমীক্ষার কাজ করছেন। পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর ভাইস-চেয়ারম্যান অমিত ঘোষ বলেন, ‘‘সোমবার থেকে এই কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই প্রতি ওয়ার্ডে টিকাকরণ কেন্দ্র খোলা করে। প্রতিবন্ধী এবং বয়স্কদের বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়া হবে।’’
বৈদ্যবাটী পুর-এলাকায় অনেক বয়স্ক নাগরিক টিকার কোনও ডোজ়ই পাননি। আধার কার্ড না থাকায় টিকা নিতে পারছেন না বলে কেউ কেউ জানিয়েছেন। শ্রীরামপুর শহরে আজ, বুধবার থেকে পুর-স্বাস্থ্যকর্মীরা সমীক্ষার কাজে বাড়ি বাড়ি যাবেন বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান প্রলয় চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘প্রথম ডোজ় অধিকাংশের নেওয়া হয়ে গিয়েছে। শনিবার ৭০ জনকে প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ১৫ জন আমাদের শহরের বাসিন্দা। বাকিরা অন্য এলাকার।’’ তিনি জানান, ভোটার তালিকা ধরে সমীক্ষা চলছে। যে সব বয়স্ক মানুষ টিকাকেন্দ্রে যেতে অপারগ, তাঁদের বাড়িতে গিয়ে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। ভদ্রেশ্বরের বিঘাটি পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রথম ডোজ় সম্পূর্ণ।
অসুস্থ এবং বয়স্কদের বাড়িতে গিয়ে টিকা দেওয়ার কর্মসূচি বেশ কয়েক দিন ধরেই চলছে শ্রীরামপুরে। পুরপ্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান গৌরমোহন দে জানান, ওয়ার্ড ধরে ধরে এই পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডে তা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে কমপক্ষে ৫০ জন এ ভাবে টিকা পেয়েছেন।