টানা বৃষ্টির জন্য মাটি ঘর ভেঙেছে। পান্ডুয়ার সিমলাগড় এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
ঝড়ের আঁচ লাগেনি। তবে, ‘দানা’র প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে শুক্রবার জনজীবন বিপর্যস্ত হল দুই জেলাতেই (হাওড়া ও হুগলি)। সর্বত্রই বাজারহাট, রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা ছিল। বাস তেমন চলেনি। ট্রেনে ভিড় ছিল না। বৃষ্টিতে বহু রাস্তায় জল জমে। বড় বিপর্যয় না ঘটায় জেলা প্রশাসন স্বস্তিতে। তবে, লাগাতার বর্ষণে ফসল নিয়ে চিন্তা থাকছে।
দুপুরে পান্ডুয়ার ভিটাসিন ব্রাহ্মণপাড়ায় মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে। গৃহকর্তা অমিত বন্দ্যোপাধ্যায় পুরোহিত। তিনি বলেন, ‘‘ঘর করার সামর্থ্য নেই। আবাস যোজনায় আবেদন করব।’’ বিডিও সেবন্তী বিশ্বাস বিষয়টি দেখা হচ্ছে বলে আশ্বাস দেন।
সদ্য বন্যাদুর্গত আরামবাগ মহকুমায় পুনর্গঠনের কাজের মধ্যেই ‘দানা’ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। মহকুমাশাসক রবি কুমার জানান, ১৭টি মাটির বাড়ির আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বড় দুর্ঘটনা নেই। প্রশাসনের খবর, ১৭টি ত্রাণকেন্দ্রে প্রায় ৬০০ জন আছেন। ২৯টি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে কয়েক জায়গায় লোডশেডিং হয়েছে। দ্রুত সংস্কারে কাজ চলছে বলে জানান বিদ্যুৎ দফতরের আরামবাগের ডিভিশনাল ম্যানেজার শুভায়ন ঘোষ। বিভিন্ন পঞ্চায়েতে শ’দেড়েক গাছ ভেঙেছে। খানাকুলের ঘোষপুরে আরামবাগ-বন্দর রোডে একটি গাছ ভেঙে পড়ে। পুলিশ ও স্থানীয়দের তৎপরতায় সেটি সরানো হয়।
বৈদ্যবাটীর ১১ নম্বর রেলগেটের পাশে, জিটি রোডে জল দাঁড়ায়। বৈদ্যবাটী স্টেশন সংলগ্ন রাস্তায় জল ভেঙে প্ল্যাটফর্মে আসা কঠিন হয়। শ্রীরামপুর থেকে ভদ্রেশ্বর পর্যন্ত প্রতিটি সাবওয়েতে (গলাপোলে) হাঁটুজল জমে। চাঁপদানির মুখার্জিগলিতে গঙ্গা লাগোয়া কিছু বাড়ির সদস্যদের স্থানীয় স্কুলে সরানো হয়। জাঙ্গিপাড়া ব্লকের রাজবলহাট ২ পঞ্চায়েতে দু’টি বিদ্যালয়ে কয়েকশো মানুষের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
জেলাশাসক, উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক এবং বিভিন্ন ব্লক অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক শীর্ষকর্তারা বৃহস্পতিবার রাতে অফিসেই ছিলেন। উলুবেড়িয়া পুরসভার কর্তা এবং আধিকারিকরাও ওই রাতে পুরভবনে ছিলেন। খোলা হয়েছিল নানা স্তরের কন্ট্রোল-রুম। কিন্তু রাতে কয়েক দফায় জোরে বৃষ্টি ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। তবে, শুক্রবার ভোর থেকেই শুরু হয় নাগাড়ে বৃষ্টি। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামীণ হাওড়ার বহু মানুষই এ দিন বাইরে বেরোননি। টানা বৃষ্টিতে বাগনানের বেড়াবেড়িয়ায় বেশ কিছু এলাকা জলমগ্ন হয়। জল জমে যায় বাগনান কেন্দ্রীয় বাস স্ট্যান্ডেও।
শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি নদেবাসী জানা বলেন, "আমাদের এলাকা দিয়ে বয়ে যাওয়া রূপনারায়ণে জলস্তর বাড়েনি। তাই বিভিন্ন এলাকার বৃষ্টির জল বিভিন্ন খাল দিয়ে রূপনারায়ণে পড়েছে। ফলে, জল জমার সমস্যা নেই।’’
বৃহস্পতিবার রাতে শ্যামপুর ১ ব্লকের প্রায় ২০০০ বাসিন্দাকে নিচু এলাকা থেকে এনে প্রাথমিক স্কুলে রাখা হয়। রান্না করা খাবার দেওয়া হয়। এ ছাড়া উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের কিছু মানুষকেও তুলে আনা হয়। শুক্রবার সকালে সবাই নিজেদের বাড়ি
ফিরে যান।
বিকেলে উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক করেন জেলাশাসক দীপপ্রিয়া পি। সেখানে ‘দানা’ নিয়ে পর্যালোচনা হয়। মহকুমাশাসক মানসকুমার মণ্ডল জানান, বাড়ি বা গাছ ভেঙে পড়ার খবর নেই। চাষের ক্ষতি কতটা হয়েছে, তা কৃষি দফতর সমীক্ষা করছে।
জেলার ফুল চাষিরা জানিয়েছেন, তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সঙ্গে হাওড়াতেও বিস্তীর্ণ এলাকায় ফুল চাষ হয়। ‘সারা বাংলা ফুল চাষি ও ফুল ব্যবসায়ী সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক নারায়ণ নায়েক বলেন, ‘‘পুজোর আগে অতি বর্ষণ ও বন্যার ক্ষতমোকাবিলা করে ফুলচাষিরা নতুন করে চারা রোপণ করেছিলেন। ফের টানা বৃষ্টিতে তার বেশিরভাগ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমরা সরকারের কাছে ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়েছি।’’