Mid day Meal

শরীর ঠান্ডা রাখতে স্কুলের মেনুতে বদল, খুশি পড়ুয়ারা 

বাংলা সাহিত্যে অনেক লেখাতেই জল ঢালা ভাত বা পান্তাভাতের গুণকীর্তন করা হয়েছে। দেবতাকে পান্তাভাত নিবেদনেরও প্রথা আছে। কম খরচের খাবার হিসেবে পান্তার জুড়ি নেই।

Advertisement

প্রকাশ পাল , বিশ্বজিৎ মণ্ডল

বলাগড় শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:৩৬
Share:

পান্তা নেওয়ার লাইনে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র।

ঠিক পান্তা না হলেও পান্তার মতোই ঠান্ডা ভাত। দীর্ঘ ক্ষণ জলে ভেজানো। সঙ্গে আলু মাখা, ডিমের ভুজিয়া, কাঁচা পেঁয়াজ আর গন্ধরাজ লেবু। ভাতের উপরে জলে ভাসছে গন্ধরাজ লেবুর গাছের পাতা।

Advertisement

না, নামী-দামি কোনও রেস্তরাঁ নয়, শনিবার এমনই খাদ্যতালিকা ছিল হুগলির জিরাট কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের মিড-ডে মিলে। প্রবল গরমে পুড়ে খাক হচ্ছে বাংলা। এমন বৈশাখী দুপুরে এ হেন খাবার পেয়ে ছাত্রছাত্রীদের আনন্দ ধরে না!

বাংলা সাহিত্যে অনেক লেখাতেই জল ঢালা ভাত বা পান্তাভাতের গুণকীর্তন করা হয়েছে। দেবতাকে পান্তাভাত নিবেদনেরও প্রথা আছে। কম খরচের খাবার হিসেবে পান্তার জুড়ি নেই। গ্রামেগঞ্জে আগের রাতে ভিজিয়ে রাখা পান্তার চল কমবেশি এখনও আছে। চাষের ফাঁকে খানিক জিরিয়ে গোগ্রাসে পান্তা সাবার করেন কৃষক। সেই পান্তা উঠে এসেছে রেস্তরাঁর ঝাঁ-চকচকে টেবিলেও। তবে, স্কুলের মধ্যাহ্ন আহারে এমন পদ বেশ হইচই ফেলেছে।

Advertisement

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টায় ভাত রান্না করা হয়। তার পরে সেই ভাত জল ঢেলে ভিজিয়ে রাখা হয়। জলের উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয় লেবু পাতা। বেলা দেড়টায় মিড-ডে মিলে সেই খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রধান শিক্ষক আব্দুল শরিফ শেখ জানালেন, গরম ভাতও ছিল। কিন্তু অধিকাংশ পড়ুয়াই জল ঢালা ভাত বেছে নিয়েছে। তাদের তরিবত করে খেতে দেখে শিক্ষকেরা শুনিয়েছেন বাঙালি সংস্কৃতিতে পান্তার উপস্থিতির কথা। সঙ্গে বলেছেন,
দুঃসহ গরমে এর উপকারিতা। এই বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলের ঘরের নাম, ‘মায়ের আঁচল’।

মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক বিধানচন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা ধারাবাহিক ভাবে মিড-ডে মিলের খাবার নিয়ে ভাবি। গরমে শরীর থেকে অনেক জল বেরিয়ে যায়। পান্তা খেলে শরীরে জলের ভারসাম্য ঠিক থাকে। তাই এই আয়োজন। পরবর্তী সময়েও এই খাবার তালিকায় থাকতেই পারে।’’ বিদ্যালয়ের সভাপতি পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘পান্তাভাত সংশ্লিষ্ট পরিবারের অভাবের সূচক ছিল। এখন পুষ্টিবিদেরা খেতে বলেন। আমরা পড়ুয়াদের শরীরের কথা ভেবেই এই খাবার করেছি। তা খেয়ে ওদের আনন্দ আমাদের খুশি করেছে।’’ পাঁচশোর বেশি পড়ুয়া পান্তা খেয়েছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান।

খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাধারণ গরম ভাতের থেকে পান্তায় আয়রন অনেক বেশি থাকে। পটাশিয়াম, ক্যালসিয়ামের মাত্রাও বেশি। গরমের দিনে পান্তা শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখে। শরীরে জলের অভাব মেটায়। তাপের ভারসাম্য বজায় রাখে।

সোমবার থেকে এক মাসেরও বেশি গরমের ছুটি। তাতে কী! পড়ুয়াদের অনেকেই বলে গিয়েছে, বাড়িতে মাকে বলবে এক থালা পান্তা সাজিয়ে দিতে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement