স্কুল ছুটির পর সিভিক ভলান্টিয়ারদের তত্ত্বাবধানে রাস্তা পারাপার। ছবি: সুব্রত জানা।
অকালমৃত্যুই পাঠ দিয়ে গেল সচেতনতার।
বেহালায় দুর্ঘটনায় ছাত্রমৃত্যুর পরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বড় রাস্তার ধারের স্কুল খোলা ও ছুটির সময়ে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকবে পুলিশ। সপ্তাহের কাজের প্রথম দু’দিনই হাওড়া ও হুগলির রাস্তার ধারে স্কুলগুলিতে দেখা মিলেছে পুলিশের। অভিভাবকেরাও প্রশাসনের এই ভূমিকায় খুশি।
এরই মধ্যে মঙ্গলবার হিন্দমোটরের একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ঢোকার মুখে মালবাহী ট্রাকের ধাক্কায় জখম হন বাইকআরোহী তিন জন। খুদে পড়ুয়া ও তার বাবা-মায়ের অল্পবিস্তর চোট লাগে। বাইকটিরও ক্ষতি হয়। পুলিশ চালক-সহ ট্রাকটি আটক করেছে।
আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন সড়কের ধারে স্কুলগুলির সামনে দেখা মিলেছে সিভিক ভলান্টিয়ারের। ওই সব স্কুল ধরে ধরে সচেতনতা শিবির এবং হাতেকলমে রাস্তা পারাপার শেখানোও শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে। এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল বলেন, “ব্যস্ত রাস্তার গায়ে স্কুলগুলিতে পড়ুয়াদের পারাপার নিয়ে আমাদের আগে থেকেই ব্যবস্থা ছিল। গত শুক্রবার বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন মহকুমার সমস্ত রাস্তার গায়ে স্কুলগুলোকে চিহ্নিত করে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কয়েকটি স্কুলের সামনে স্পিড ব্রেকার করে দেওয়া হয়েছে। সচেতনতা শিবিরও চলছে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমায় বিভিন্ন ব্যস্ত সড়কের গায়ে গোঘাটের ভগবতী গার্লস হাইস্কুল, বদনগঞ্জ হাইস্কুল, আরামবাগের শহরে পিসি সেন রোডের গায়ে আরামবাগ প্রাইমারি স্কুল এবং আরামবাগ গার্লস স্কুলের, কালীপুর স্বামীজি হাইস্কুল, খানাকুলের রামনগর অতুলপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয় ইত্যাদি স্কুলের সামনে পুলিশি ব্যবস্থা রয়েছে। গোঘাটের পাতুলসারা প্রাথমিক স্কুলের জন্যও পুলিশি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুলিশ জানায়, পাতুলসারা মোড়ে এমনিতেই সর্বক্ষণ সিভিক ভলান্টিয়ার থাকে। স্কুলের সময়ে নজরদারি বাড়ানো হবে।
পান্ডুয়া মেলাতলার কাছে মুজিবর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়, মগরার জিটি রোড ব্রিজের কাছে উত্তমচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনেও দেখা মিলেছে পুলিশের। তবে পান্ডুয়ার তেলিপাড়া মোড়ের কাছে জিটি রোডের ধারে পান্ডুয়া শশীভূষা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে এ দিন পুলিশি নজরদারি ছিল না। পান্ডুয়া থানার এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘সামনের দু’টি মোড়ে যান নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত পুলিশ কর্মী ছিলেন। ওই স্কুলের সামনে যান নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন নেই।’’
হাওড়ার সাঁকরাইলের বড় রাস্তার ধারে স্কুলগুলির সামনেও ছিল পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ার। স্কুলের সময়ে পুলিশের নজরদারিও বাড়ানো হচ্ছে। হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা জানান, কর্মী কম থাকায় অনেকটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিভিক ভলান্টিয়ারদের। হাওড়া গ্রামীণের বড় রাস্তার ধারে স্কুলগুলির পরিস্থিতি এক। গ্রামীণ জেলা ট্রাফিকের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেহালার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন নির্দেশ এসেছে ঠিকই, তবে আগেও সিভিক ভলান্টিয়াররা বড় রাস্তার ধারের স্কুলগুলির উপরে নজর রাখতেন।’’ এ দিন উলুবেড়িয়ার আমতা রোডে যদুরবেড়িয়া বাস স্টপে দেখা গেল, দু’জন সিভিক ভলান্টিয়ার পড়ুয়াদের রাস্তা পারাপার করিয়ে দিচ্ছেন। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সপ্তাহব্যাপী বিভিন্ন স্কুলে পথ নিরাপত্তা নিয়ে সচেতনতা অনুষ্ঠানও চলছে। সাঁকরাইলের এক পড়ুয়া বলে, ‘‘এখন পুলিশকাকুরা হাত ধরে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছেন। ভয় করছে না।’’ চন্দননগরের এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘কিছুটা নিশ্চিন্ত লাগছে। তবে এই নজরদারি যেন জারি থাকে।’’